দেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে দিনকে দিন। বিল পরিশোধ, অনলাইন কেনাকাটা, বিদেশ ভ্রমণ কিংবা জরুরি খরচ- সবক্ষেত্রেই এখন ক্রেডিট কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পণ্য হয়ে উঠেছে আমাদের জন্য। তবে চাইলেই যে কেউ এই কার্ড নিতে পারবেন না। সে জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও যোগ্যতা পূরণ করতে হয়।
চলুন জেনে নেই কীভাবে পাওয়া যায় ক্রেডিট কার্ড, কী কী কাগজপত্র লাগে এবং কারা কার্ড পাওয়ার যোগ্য।
কারা পেতে পারেন ক্রেডিট কার্ড?
- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে প্রথম শর্ত হলো, আপনার নিয়মিত কোনো আয় থাকতে হবে বা ব্যাংকে পর্যাপ্ত জমানো টাকা থাকতে হবে।
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে মাসিক কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা বেতন থাকতে হয়। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যাংকে বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার লেনদেন থাকতে হয়।
- এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা সরাসরি কার্ড না পেলেও, পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের ওপর নির্ভর করে তারা ‘অ্যাড-অন’ কার্ড পেতে পারেন।
কীভাবে আবেদন করবেন?
বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকই অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন গ্রহণ করছে। আবেদন প্রক্রিয়াসম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিক্রয় প্রতিনিধি গ্রাহকের ঠিকানায় গিয়ে প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ করে নিয়ে যান।
সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয় কার্ড ও পিন নম্বর। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকে নতুন কোনো হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলতে হয় না। তবে আবেদন করতে হলে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিলের কপি (বর্তমান ঠিকানা প্রমাণে)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সাধারণত ৬ মাসের)
- নমিনির এনআইডি ও ছবি
- রেফারেন্স (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোনো গ্রাহকের তথ্য)
ব্যাংক এসব তথ্য যাচাই করে দেখে, গ্রাহকের লেনদেন সক্ষমতা এবং ক্রেডিট স্কোর কতটা সন্তোষজনক। যাচাই-বাছাইয়ের পরই নির্ধারণ হয় কার্ড দেওয়া হবে কি না এবং তার ক্রেডিট লিমিট কত হবে।
খরচ ও সুদের নিয়ম
ক্রেডিট কার্ডের অর্থ হলো, আপনি এখন খরচ করছেন কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই অর্থ ব্যাংককে ফেরত দিতে হবে।
সঠিক সময়ে বিল পরিশোধ না করলে গুনতে হয় অতিরিক্ত সুদ। তাই কার্ড পাওয়ার পর প্রথমেই পিন নম্বর সেট করে নিতে হয় এবং প্রতি মাসে কোন তারিখের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হবে, তা জেনে রাখা জরুরি।
সাধারণত প্রতিটি ব্যাংকে বার্ষিক ফি ১,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে অনেক ব্যাংক এই ফি মওকুফ করে দেয়।
বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের যাত্রা
বাংলাদেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু হয় ১৯৯৭ সালে, তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের (বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক) মাধ্যমে। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংক ও ভনিক বাংলাদেশ (বর্তমানে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স) এ সেবা শুরু করে।
বর্তমানে দেশের প্রায় ৪০টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। অধিকাংশ ব্যাংকের রয়েছে ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডের কার্ড।
তবে এর বাইরে কিছু ব্যাংক বিশেষ ব্র্যান্ডের কার্ডও দিচ্ছে। যেমন:
সিটি ব্যাংক: অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস
প্রাইম ব্যাংক: জাপান ক্রেডিট ব্যুরো
ইবিএল: ডিনার্স ক্লাব
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক: নেক্সাস পে
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক: ইউনিয়ন পে ইন্টারন্যাশনাল
ব্যবহার ও বিল পরিশোধে যত্নবান হলে ক্রেডিট কার্ড হতে পারে এক জরুরি ও কার্যকর আর্থিক সহায়ক। তবে অসতর্কতা ও বিল পরিশোধে অবহেলা করলে তা হতে পারে বাড়তি ঝামেলার কারণ।
মন্তব্য করুন