বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে আরও স্মাট করে গড়ে তুলতে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থায় এবার যুক্ত হয়েছে বিশ্বখ্যাত ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন ‘লিডো ফ্লাইট ৪ডি।’ জার্মানির লুফথানাসা সিস্টেমের এই ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন সফটওয়্যারটির কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) উদ্বোধন করা হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দীর্ঘদিন ধরেই সিটা ফ্লাইট প্ল্যান সিস্টেম ব্যবহার করে আসছিল। সাময়িকভাবে কিছুদিন স্কাইপ্ল্যান সিস্টেমও ব্যবহার করে উড়োজাহাজ সংস্থাটি। তবে দেশের এভিয়েশন ইতিহাসে এই প্রথম ‘লিডো ফ্লাইট ৪ডি’ ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন চালু করা হলো।
উল্লেখ্য, লুফথানাসা সিস্টেমের এই ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মতো বিশ্বখ্যাত এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবহার করে আসছে।
বিমান বংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম জানিয়েছেন, বিমানকে একটি স্মার্ট এয়ারলাইন্সে রূপান্তর করতে তারা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে লুফথানাসা সিস্টেমের ‘লিডো ফ্লাইট ৪ডি’ ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশনকে বেছে নেওয়া হলো। যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা আরও নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে বিমান সব সময়েই চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
তিনি বলেন, ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন ‘লিডো ফ্লাইট ৪ডি’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমরা অত্যন্ত নিখুঁত, সুরক্ষিত এবং সাশ্রয়ীভাবে ফ্লাইট প্ল্যান করতে পারব। এ ছাড়াও স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবহাওয়া ও প্রতিকূল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিকল্প পন্থা অবলম্বনেও সহযোগিতা পাওয়া যাবে এই সফটওয়্যারে। ফ্লাইট আকাশে চলাকালীন লাইভ মনিটরিং, সবচেয়ে কম খরচের যাত্রা পথ নির্ধারণ এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরাপদ ফ্লাইটের জন্য নিখুঁত পারফরম্যান্স হিসাব করা সম্ভব হবে এতে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে ওই সফটওয়্যারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে লুফথানাসা সিস্টেমের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিইও টম ভ্যানড্যানডিল বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন কি
ভিয়েশন ও উড়োজাহাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ফ্লাইট প্ল্যান করা এবং যেসমস্ত দেশের ওপর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে সেসব দেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিটকে অবহিত করা ব্যাধ্যতামূলক। ফ্লাইট প্ল্যান করার সময় গন্তব্যের দূরত্ব, উড়োজাহাজের গতিবেগ, আবহাওয়ার অবস্থা, গন্তব্যের আবহাওয়ার অবনতি বা জরুরি অবস্থায় সম্ভাব্য বিকল্প গন্তব্য নির্ধারণ, জ্বালানি তেলের পরিমাণ নির্ধারণ করার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনার নামই হলো ‘ফ্লাইট ডিসপ্যাচ’। যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই কাজগুলো করা হয়, সেটাই ‘ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন’।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, কোন পথে এবং কোন উচ্চতায় উড়োজাহাজ উড়ানো হলে সবচেয়ে কম জ্বালানি খরচ হবে, কোন দেশের ওপর দিয়ে ফ্লাই করলে ওভার ফ্লাই চার্জ কম লাগবে, যে এয়ারপোর্ট ব্যবহার করা হবে তা সংশ্লিষ্ট এয়ারক্রাফটের অবতরণ-উড্ডয়নের উপযোগী কিনা, কোন সাইক্লোন বা অগ্নুৎপাতের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বাজে আবহাওয়া বিরাজ করছে কি না- এসব বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। নতুন স্থাপিত অত্যাধুনিক ‘লিডো ফ্লাইট ৪ডি’ ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন সফটওয়ারের মাধ্যমে এসব কাজ নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘লিডো ফ্লাইট ৪ডি’ ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন ব্যবহারের মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ২০ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন