গৃহকর্মী তামান্না হত্যার প্রতিবাদে এবং আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা ও খিলগাঁও এলাকায় চারটি মানববন্ধন করেছে কর্মজীবী নারী ও দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র। মানববন্ধনে ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে গৃহকর্মী তামান্না হত্যার বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।
“গৃহকর্মী তামান্না হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই” শ্লোগানে আজ ৬ই জুলাই, (বৃহষ্পতিবার) এসব মানববন্ধন করা হয়েছে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে গৃহকর্মী অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক।
মানববন্ধনে বক্তারা তামান্না হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
মিরপুরে সংগঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, আবুল হোসেন ও সুপার ইন্সপেক্টর, সালমা বেগম।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবুল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, প্রায় সব ঘটনার মতো এই ঘটনায়ও একটি মামলা হয়েছে এবং মামলার আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছে। জামিনে মুক্তি দেওয়া এই বিষয়টির প্রতি সমালোচনা করে তিনি বলেন, “জামিনে মুক্তি দেওয়া এই পদ্ধতিটি অভিযোগকারির সঠিক বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা”। তামান্না হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়েছে, এই মামলাটি যদি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০১০ এর আওতায় করা হতো তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেতো না। তিনি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্তের বিচার দাবি করেন এবং তার প্রয়োগ চান তাহলে তামান্নার মতো আরো গৃহকর্মীদের উপর করা নির্যাতানের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সাব ইন্সপেক্টর সালমা বেগম বলেন, তামান্নার মতো গৃহকর্মীর সাহায্যেই আমি আজ পুলিশে কাজ করতে পারছি। আমি গৃহকর্মীদের জন্য যে নীতিমালা আছে তার বাস্তবায়ন চাই। এই আইনের আওতায় কেউ যেন ছাড় না পায়।
দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক, ফজিলা খানম সকলের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ি সকল নাগরিক সমান সুযোগ ও সমান অধিকার পাবে, তবে গৃহকর্মীরা কোন সুরক্ষিত থাকবে না? কেন তারা প্রাণ হারায়? কেন অভিযুক্ত ব্যক্তি অরুনিমা মৌ জামিনে মুক্তি পেয়েছে? তিনি এই অপরাধের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
গৃহকর্মী নূরজাহান, জেসমিন, কুলসুম তাদের বক্তব্যে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবি করেন।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নিয়োগকারী জনকল্যাণ সমিতির পক্ষে ইউসুফ হারুন ও গোলাম মোস্তফা, কর্মজীবী নারীর পক্ষ থেকে প্রকল্প সমন্বয়ক, ফারহানা আফরিন তিথি ও হুরমত আলী, দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যুগ্ম পরিচালক, বিকাশ শাহা ও ফজিলা খানম, হ্যালো টাস্কের পক্ষ থেকে অটুট চাকমা, বাংলাদেশ লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর পক্ষ থেকে চৌধুরী বোরহান উদ্দীন ও ইউসুফ আল মামুন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সৈয়দা সামিহা আমিজ, বাড্ডা এলাকার শিক্ষক আসমান আলী, বাড্ডা এলাকার যুবনেতা ইরান মোল্লাহ্, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ এর ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহবায়ক শেখ শাহানাজ, এ্যাপেক্স বডির সদস্য সানজিদা ইসলাম অন্তরা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা সেকান্দর হায়ৎ এর সভা গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে নূরজাহান (মিরপুর এলাকা), জেসমিন (মিরপুর), কাজল (বাড্ডা), কুলসুম (খিলগাঁও), পথচারী মিরা ভৌমিক প্রমূখ।
তামান্না হত্যার প্রতিবাদে সংহতি বক্তব্য রাখেন, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স, ইউসেপ বাংলাদেশ, রাড্ডা, অক্সফাম এর মত সংস্থার প্রতিনিধিরাও।
অক্সফাম এর প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দা সামিহা আজিম তার বক্তব্যে এই হত্যার প্রতি তীব্র নিন্দা জানান এবং এই হত্যার বিচারের দাবি জানান।
কর্মজীবী নারীর সমন্বয়ক ফারহানা আফরিন তিথি বলেন, গৃহকর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে, এটা কোন ক্ষমতার খেলা নয়।
সমাবেশ শেষে কর্মজীবী নারীরা বাউনিয়াবাধ এলাকায় একটি মিছিল প্রদক্ষিন করে। উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের আরামবাগান এলাকায় নয়তলা বাসার ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয় গৃহকর্মী তামান্নাকে।
মন্তব্য করুন