জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রথম দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হতে শুরু করেছে। শনিবার (২৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর বন্দর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে।
এতে বন্ধ হয়ে গেছে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নও। এতে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর চট্টগ্রামে চরম অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। ভোগান্তির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী এবং রপ্তানিকারকরা।
সিএন্ডএফ এজেন্টের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার বিকেল পর্যন্ত জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো কার্যক্রম চালু ছিল। এসব জাহাজের নিবন্ধনসহ অন্যান্য কার্যক্রমের অনুমোদন আগেই হয়েছে। তবে নতুন আসা যেসব জাহাজের নিবন্ধন হয়নি, সেগুলো জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে পুরো বন্দর অচল হয়ে পড়বে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন থেকে খালাস পর্যন্ত সব কার্যক্রম কাস্টমসের অনুমোদনে হয়। কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া এসব কার্যক্রমের কোনোটি হয় না। ফলে কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ হলে বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন থেকে খালাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সব কার্যক্রম কাস্টমসের অনুমোদনে হয়। কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া এসব কার্যক্রমের কোনোটি হয় না। ফলে কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ হলে বন্দরের কার্যক্রমেও এর প্রভাব পড়ে।
শনিবার (২৮ জুন) সরেজমিনে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে থাকায় পুরো অফিস প্রায় ফাঁকা। আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন, খালাস ও রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন পরবর্তী জাহাজে ওঠানো কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পূর্বে শুল্কায়ন করা চালানগুলোর খালাসেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। বন্দরের গেটে অবস্থানরত কাস্টমস কর্মকর্তারা পণ্য স্ক্যানিং ও পরীক্ষণ না করায় বন্দর কর্তৃপক্ষও পণ্য ছাড় দিচ্ছে না।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, শনিবার থেকে সারাদেশে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কমপ্লিট শাটডাউন কার্যক্রম চালু থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। পাশাপাশি, সারাদেশের রাজস্ব দপ্তর থেকে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে।
পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা জাতীয় রাজস্ব ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনাও করেছেন, যাতে রাজস্ব ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার দ্রুত সম্ভব হয়।
পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং দেশের স্বার্থে যৌক্তিক দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পালিত হচ্ছে।
মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস বিভাগের প্রধান আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, আগের অনুমোদন থাকায় জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ চলছে। তবে রপ্তানি শুল্কায়ন না হলে পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। আবার যেসব জাহাজ এখন নিবন্ধন হয়নি, সেগুলোতে কনটেইনার ওঠানো-নামানো করা যাবে না।
চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পার্সোনাল অফিসার নাসির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বন্দর জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামার কাজ এখনো স্বাভাবিক আছে। তবে খালাস প্রক্রিয়ার সেসব পয়েন্টে কাস্টমস যুক্ত আছে, সেখানে কিছুটা প্রভাব পড়ছে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন কালবেলাকে বলেন, এনবিআর কর্মীদের শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে পড়বে। এ কর্মসূচির কারণে বন্দরে কনটেইনার জট বাড়াবে। আমদানিকারকদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হবে। কিছুদিন আগে এনবিআর এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলমবিরতি পালন করেছেন। এতে করে বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার জট তৈরি হয়েছিল। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সংকট তৈরি হয়। এ সংকট কাটিয়ে ওঠার সময়ে আবারও এ আন্দোলন অনাকাঙ্ক্ষিত।
মন্তব্য করুন