শাটলের ভেতরে জায়গা না পেয়ে ট্রেনের ছাদে করে ক্যাম্পাসে ফিরতে গিয়ে আহত হওয়া চবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তাদের ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে (আইসিইউ) স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসকরা।
তারা হলেন- আমজাদ হোসেন সোহাগ (১৮), খলিলুর রহমান (২২) এবং অংসইনু মারমা (২১)। এ ছাড়া বাকিদের মধ্যে ৫ জন নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন- তাইজুল ইসলাম (২১), আবু সাইদ (২৪), সান আহমেদ (২১), রাফসান (২৩) ও আসলাম (২২)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক। তিনি বলেন, রাতে শাটল দুর্ঘটনায় আহত মোট ১৬ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজনকে নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সকালে ৮ জনের মধ্যে তিনজনকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে। ৫ জন ওয়ার্ডে আছেন। আহত অপর আটজন ক্যাজুয়ালিটিতে আছে বলেও জানান তিনি।
রাত সাড়ে ৮টার বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চৌধুরীহাট এলাকায় আসলে রেললাইনে ওপরে ঝুলে থাকা গাছের ডালপালার ধাক্কায় শাটল ছাদে থাকা শিক্ষার্থীরা আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে প্রায় ১৬ জন শিক্ষার্থী মুখে, মাথায় ও ঠোঁটে আঘাত পান।
পরবর্তীতে ট্রেন ফাতেয়াবাদ স্টেশনে থামলে আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে অন্য শিক্ষার্থীরা।
সাড়ে ১০টার দিকে শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে পৌঁছালেই শিক্ষার্থীরা নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দেন। এ সময় তারা আগুন জ্বালিয়ে প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থী আহতের জবাব ও শাটল ট্রেনের বগি বাড়ানোর দাবি জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উপাচার্যের বাসভবনে প্রতি কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। উপাচার্যের বাসভবন থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পরিবহন দপ্তরে গিয়ে সেখানে থাকা প্রায় ষাটের অধিক গাড়ি ভাঙচুর করে।
একই সময় তারা নিরাপত্তা দপ্তরেও ভাঙচুর চালায়৷ সেখান থেকে ফিরে রাত ১টার দিকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ও অতিথি ভবনে অবস্থান করা প্রক্টরিয়াল বডির ওপর আক্রমণ চালায় এবং প্রক্টরের গাড়িসহ ক্লাব ভাঙচুর করে।
এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন এবং আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে উত্তপ্ত করে তোলেন পুরো ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পসে যখন আগুন জ্বলছিল তখন উপাচার্য ড. শিরিন আখতার আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে আসেন। এ সময় তিনি আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, একমাত্র শাটল ট্রেনের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চবির বেশ সুনাম থাকলেও মূলত এই শাটল দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের তুলনায় শাটল অপর্যাপ্ত হওয়ায় বাধ্য হয়ে ছাদে উঠতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে শাটলের বগি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসলেও মিলছে না কোনো সুফল। যার ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বলেন, আমরা চবি ক্লাবে অবস্থানকালে হঠাৎ করে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমরা পুরো প্রক্টরিয়াল বডি কোনোরকম প্রাণে বেঁচে যাই। এরপরও তারা আমাদের আবদ্ধ করে রাখে অনেক সময়। এটা এটেম্প্ট টু মার্ডার। আমরা এর বিচার চাই।
প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার বলেন, আজকের শাটল ট্রেনের ছাদে থাকা প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী গাছের বাড়ি খেয়ে আহত হয়েছেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। তা ছাড়া, যারা ক্যাম্পাসের এই তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত, তারা কোনোভাবেই পার পাবে না।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, যারা আহত হয়েছে, আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আমরা দেখব যেন তারা সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায়। তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে আমরা এটাই চাইব।
শাটলের বগি বৃদ্ধি ও ডেমু ট্রেন চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাটলের ব্যাপারে আমরা বলতে বলতে শেষ। রেলওয়ে মন্ত্রী আমাদের গত বছরই বলেছিলেন ট্রেন দিবেন। আমরা পাইনি। তারা বলেছে, চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন আরও দুই তিনটা বগি বাড়ানোর।
মন্তব্য করুন