চট্টগ্রাম বন্দরে বৈধভাবে পাস নিয়ে প্রবেশ করে জাহাজের খালি কন্টেইনারের ভিতরে ঢুকে অবৈধভাবে যাত্রা করা লিটন মোল্লা (২৩) নামে এক যুবক সিঙ্গাপুর যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু জাহাজ সিঙ্গাপুর পৌঁছানোর আগেই সাগরে জাহাজের ক্রুদের হাতে ধরা পড়েন লিটন।
পুলিশ জানিয়েছে, পানির পিপাসা পেলে লিটন কন্টেইটনার থেকে বের হয়ে আসলে বিষয়টি ক্রুদের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাকে ওই জাহাজের করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় এবং ফিরতি ট্রিপে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সমুদ্রপথে পাসপোর্ট বা বৈধ কোনো ভ্রমণ দলিল ব্যতীত কন্টেইনারে লুকিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যাওয়ার অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বন্দর থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা। তিনি বলেন, এই ঘটনায় শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিদর্শক নাছির উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে থানায় সোপর্দ করেছেন।
লিটন মোল্লা মাগুরা জেলার ইছাপুর গ্রামের ফারুক মোল্যার সন্তান। তার কাছ থেকে বন্দরের প্রবেশ কার্ড, ড্রইিভিং লাইসেন্স ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মো. লিটন মোল্যা (২৩) পেশায় একজন ড্রাইভার। সে দীর্ঘদিন ধরে জাহাজপথে বিদেশ গমনের পরিকল্পনা করছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত লিটন তার ভোটার আইডি কার্ড, ছবি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দিয়ে বন্দর গেইট পাস পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে বন্দর প্রবেশ কার্ড ইস্যু করেন। পরে লিটন ইস্যুকৃত গেইট পাস দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-২ গেইট দিয়ে ৫টা ২৩ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এরপর লিটন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত সাড়ে ১১টার দিকে ‘এমভি হাইয়ান ভিউ নামক জাহাজের পেছন দিয়ে রেলিং বেয়ে জাহাজে উঠে। এরপর অবৈধ ভাবে বিদেশ যাওয়ার জন্য জাহাজের খালি কন্টেইনারের ভিতরে লুকিয়ে থাকে। জাহাজে কন্টেইনারের ভিতরে থাকাবস্থায় পানির পিপাসায় ও খাবারের জন্য কন্টেইনার থেকে এক পর্যায়ে বাইরে আসেন লিটন। এরপর জাহাজের ক্রুদের নজরে আসলে তাকে আটক করে জাহাজের ক্যাপ্টেনের হেফাজতে রাখে। পরে জাহাজটি পুনরায় সিঙ্গাপুর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ১ নম্বর বার্থে ভিড়ে। পরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২২ এর ১২ ধারা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে এবং সর্ব সাধারণের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে, বন্দর সীমানার অন্তর্ভুক্ত সকল স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষিত বন্দর এলাকা হিসাবে গণ্য। কেউ যদি পাস নিয়ে বৈধভাবেও বন্দরের ভিতরে প্রবেশ করে তাহলেও তার অবৈধভাবে জাহাজের ভিতরে ঢুকে বা কন্টেইনারের ভিতরে লুকিয়ে দেশের বাহিরে যাবার কোনো আইনগত অনুমতি নাই। লটিন পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের মত স্পর্শকাতর ও সংরক্ষিত এলাকায় ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে বৈধভাবে পাস নিয়ে প্রবেশ করে। বন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বন্দরের বার্থে থাকা জাহাজে খালি কন্টেইনারের ভিতরে লুকিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে সিঙ্গাপুর চলে যাওয়ার বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ করেন। তাই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন