যেখানে একটি জারে (২০ লিটার) পানি সরবরাহ করে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সর্বমোট খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সেখানে খুচরা বাজারে এক জার পানি বিক্রি হচ্ছে শুধু ১০ থেকে ১৫ টাকা। প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসাকে কার থেকে সস্তা বিক্রি করবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ দ্বারা বোঝার আর অবকাশ থাকে না যে কতটুকু বিশুদ্ধ পানি ভোক্তারা পান করছে। আদৌ কি ভোক্তারা জানে এই পানি কতটুক নিরাপদ স্বাস্থ্যের জন্য। এই ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীরা মানহীন পানি সরবরাহ করে ভোক্তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পানিতে জমে থাকে শেওলা, অনেক সময় মিলে বিভিন্ন পোকাও। আর এইসব মানহীন পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ভোক্তারা। এগুলো যেন দেখার কেউ নেই।
এভাবেই তদারকি সংস্থার অবহেলার কারণেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রয়োজনীয় মান পরীক্ষা ছাড়াই উৎপাদিত পানি বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে এইসব পানি। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে নামে বেনামে ১৫-২০টি মানহীন পানির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে নেই কোনো বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র। প্রতিদিন পানি ভর্তি শত শত জার বিভিন্ন অফিস, দোকান, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক হোটেলে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) চট্টগ্রামের মাধ্যমে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের মধ্যে বিএসটিআই অনুমোদিত কোনো পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেই। নিজস্ব লোকবল সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঠিকমতো তদারকি করতে পারছে না।
ভোক্তাদের অভিযোগ, এসব পানি পান করে পেটের সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হল, সোনাইছড়ি এলাকায় অবস্থিত একোয়া ওয়ান ও একোয়া টু, কুমিরা এলাকায় অবস্থিত নীল, পৌরসভার দোয়ীপাড়ায় অবস্থিত চট্টলা, সৈয়দপুর এলাকায় অবস্থিত সততা, বাড়বকুণ্ড এলাকায় অবস্থিত আরও ড্রিংকিং ওয়াটার, ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থিত তৃপ্তি ড্রিংকিং ওয়াটার, বাঁশবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত রবি ড্রিংকিং ওয়াটার, এস কে এম এলাকায় অবস্থিত ম্যাক্স ড্রিংকিং ওয়াটার, বাড়বকুণ্ড এলাকায় এন আর ড্রিংকিং ওয়াটার, এ ছাড়াও বেনামে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কুমিরা এলাকায় নীল নামক একটি পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে নোংরা পরিবেশে পানি বোতলজাত করা হচ্ছে। ভোক্তাদের কাছে পানি নিয়ে যাওয়ার আগে যেসব শর্তাবলি আছে তার বিন্দুমাত্র মানা হচ্ছে না। উপজেলার মধ্যে প্রায় সব পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চিত্র একই।
সীতাকুণ্ড পৌরসভা এলাকার দোকানদার দিলীপ বলেন, একধরনের বাধ্য হয়ে এইসব পানি পান করতে হচ্ছে। পানিতে অনেক সময় ময়লা, পোকা ও শ্যাওলা জমে থাকে।
রনি নামের আরেক দোকানদার বলেন, জারের পানিতে বেশ কয়েকবার পোকা ও ময়লা পাওয়া গিয়েছে। তাই বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসি।
তৃপ্তি ড্রিংকিং ওয়াটারের মালিক কাদের বলেন, সবকিছু ম্যানেজ করেই চলছি।
একোয়া ড্রিংকিং ওয়াটারের মালিক মামুন চৌধুরী বলেন, বিএসটিআইর নিবন্ধন নেই। তবে অনেক ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। আর বাকি প্রক্রিয়াগুলো করে ফেলব।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুরু উদ্দিন রাশেদ কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের পানি বেশির ভাগই অপরিশোধিত ও নিরাপদ নয়। এ পানি ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, ভাইরাস, ডায়রিয়া, কলেরা রোগের ঝুঁকি রয়েছে। এ ধরনের পানির মধ্যে আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত ধাতু থাকতে পারে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এ ধরনের পানি ব্যবহারের ফলে ত্বক, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকিও।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রানা দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, বিএসটিআইয়ের সনদ ছাড়া পানি উৎপাদন ও বিপণন সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ কালবেলাকে বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআইয়ের নিবন্ধন করতে হবে। যদি তা না করে, তাহলে সেটি হবে অবৈধ। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে মালামাল ক্রোক এবং জরিমানা করি।
মন্তব্য করুন