কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে স্কুলশিক্ষার্থীদের জোর করে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দলীয় এমন কর্মসূচিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এমনটাই জানা যায়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২৪ জুলাই) বিকেলে কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের চৌরঙ্গী কলেজ মাঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফের (জর্জ) অনুগত আওয়ামী লীগের নেতারা এ সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে মিছিল নিয়ে যান প্রধান শিক্ষক। তার পাশে ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল কমিটির সভাপতি। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা একটি নৌকা শিক্ষার্থীরা ঠেলে এগিয়ে যায়। স্কুলের ব্যান্ডদল বাদ্য বাজাচ্ছে আর পেছনে মেয়েদের একটি দলের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সমাবেশে চৌরঙ্গী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম ও সভাপতি মাহফুজুর রহমানসহ অন্য শিক্ষকদের নেতৃত্বে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে শোভাযাত্রা দিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। পাশাপাশি উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী ও সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মিছিল নিয়ে সমাবেশে যান। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মঞ্চের সামনে রাখা চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়। সমাবেশ শেষ হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
সংসদ সদস্যের সমাবেশে যাওয়ার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ ছিল জানিয়ে চৌরঙ্গী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের স্কুল ছিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কিন্তু সমাবেশের জন্য ছুটির পর যেনো কেউ স্কুল থেকে বের হতে না পারে সে জন্য সব শিক্ষার্থীদের থেকে বই ও ব্যাগ রেখে দেওয়া হয়। এরপর সাড়ে ৪টার দিকে প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি মিছিল সহকারে তাদের সমাবেশে নিয়ে যান।
মিছিলে স্কুলের প্রায় সব শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল বলেও জানায় শিক্ষার্থীরা।
কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, স্কুল ছুটির পর তাদের বাচ্চাদের থেকে ব্যাগ রেখে দেওয়া হয়। এছাড়া সমাবেশে না গেলে শাস্তি দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়।
এ বিষয়ে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, আগের থেকেই জানানো হয়েছিল সমাবেশে সবাইকে যাওয়ার বিষয়ে। স্কুলের স্যার তাদের শোভাযাত্রায় নিয়ে যান। মিছিলে প্রধান শিক্ষক-সভাপতিসহ অন্য শিক্ষকরা ছিলেন। এছাড়া তাদের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাও সমাবেশে গিয়েছিলেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাহফুজুর রহমান জানান, তিনি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। অল্প কিছু ছেলেমেয়ে সমাবেশে গিয়েছিল। তবে বেশিক্ষণ ছিল না তারা।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে শিক্ষার্থীদের জোর করে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যান। এভাবে স্কুলশিক্ষার্থীদের সমাবেশে নেওয়া দুঃখজনক।
এদিকে এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, স্কুলের পাশে এমপি আসছে, তাই ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই অভিভাবকদের সঙ্গে মিছিল করে সমাবেশে যায়। তিনি বা তাদের কোনো শিক্ষক নিয়ে যাননি।
কুমারখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এজাজ কায়সার জানান, বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে কেউ তাকে কিছুই জানাননি।
মন্তব্য করুন