কোটাবিরোধী আন্দোলন ও চলমান কারফিউয়ের কারণে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন সার্ভিস। যাত্রার ১০ দিন পূর্বে টিকিট ক্রয়ের সুযোগ থাকায় অনেকেই অগ্রিম টিকিট ক্রয় করলেও ট্রেন চলাচল করেনি। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধে কোটি কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে রেলওয়ে।
অন্যদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সারা দেশের হাজার হাজার যাত্রীর টিকিটের টাকা আটকে রয়েছে। এসব টাকা ফেরত দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে রেল প্রশাসন। তবে যাত্রীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে অগ্রিম বিক্রি হওয়া টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়ার কথা বললেও আদৌ যথাসময়ে টাকা ফেরত দিতে পারবে কিনা নাকি দিনের পর দিন আটকে থাকবে সেই ‘টেনশন’ ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন যাত্রীরা। তাছাড়া সারা দেশে কারফিউ শিথিল হলেও এখনও অনিশ্চিত ট্রেন চলাচলে।
তবে বুধবার (২৪ জুলাই) রেলভবনের কন্ট্রোল অর্ডারে নির্দেশনা রয়েছে দিনের বেলায় কারফিউ শিথিল থাকাকালে যেসব ট্রেন চালানো সম্ভব, সেসব ট্রেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ক্লিয়ারেন্স পাওয়া সাপেক্ষে পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, যেসব ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে তার বিবরণ প্রতিটি জোনাল কন্ট্রোলকে অবহিত করতে হবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ে প্রশাসন টাকা ফেরত দিতে ইন্টারনেট সেবা চালু হলে যাত্রীরা টিকিট রিফান্ডের জন্য অন্তত ৭ দিন সময় পাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার শাহাদাত আলী।
তিনি কালবেলাকে বলেন, ট্রেনের টিকেট নির্ধারিত সময়ে তারিখ অনুযায়ী বিক্রয় করা হলেও সাধারণ ছুটির কারণে গেল শনিবার থেকে ট্রেন চলাচল করেনি। ইন্টারনেট সেবা চালু হলে বাতিল হওয়া টিকিটগুলোর টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কাউন্টার থেকে নেওয়া টিকিটগুলো সংশ্লিষ্ট স্টেশনে রিফান্ড করতে হবে। এতে যাত্রীদের অন্তত ৭ দিন সময় দেওয়া হবে। তাছাড়া চলাচল শুরুর বিষয়ে আমাদের একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যাত্রার দিনসহ ১১ দিন পূর্বে অগ্রিম টিকিট অনলাইন ও কাউন্টারে বিক্রি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই হিসেবে ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। ১৯ জুলাইয়ের আগেও অগ্রিম টিকিট বিক্রি হওয়ায় ১৯ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে কোনো ট্রেন চলাচল করেনি। দেশব্যাপী সহিংসতার কারণে যাত্রীবাহী ও দূরপাল্লার বাস সার্ভিস বন্ধ থাকায় রেলের টিকিট বিক্রি সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ২০ জুলাই সকাল থেকে কারফিউ ও সারা দেশে দুই দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ওসমানসহ একাধিক ট্রেন যাত্রী জানান, অনলাইনে টিকেট কেটেছিলাম যাত্রাও করতে পারিনি। এসব টিকিটের টাকা ফেরত পাব কিনা টেনশনে রযেছি।
নাজিম নামের একজন যাত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য ভারত যাব, তাই ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করেছিলাম সোনার বাংলা ট্রেনের। কিন্তু দেশের এই অবস্থা ট্রেন চলাচল বন্ধ হযে গেছে। এতে যাত্রাও করতে পারিনি। এখন টিকিটের টাকাটা কখন ফেরত পাব সেটাও জানি না।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়ে সর্বশেষ অর্থবছরে যাত্রী, মালামাল ও পার্সেল খাত থেকে বার্ষিক করেছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। পশ্চিমাঞ্চলেও প্রায় সমপরিমাণ আয় হয়েছে। শনিবার থেকে ট্রেন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ কোটি টাকা হারে লোকসান দিয়েছে রেলওয়ে। এ হিসেবে বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী, পণ্য ও পার্সেলখাতে মোট লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, রেল প্রশাসনের ঘোষণা মতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব সময়ে ইন্টারনেটে যেসব ট্রেনের টিকিট অনলাইনে কেটেছে, সেগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিশোধ বা ফেরত দেওয়া হবে। তবে ট্রেনগুলো নিরাপদে রাখা হয়েছে। দেশের জরুরি অবস্থায় রেলের সব স্থাপনায়ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন