ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা ও নৈরাজ্য। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ডাকাতিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেকে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জে নৈরাজ্য ঠেকাতে সরকারি স্থাপনা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারা দিচ্ছেন জাতীয়তাবাদী যুবদল এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ১৫ আগস্ট ঘিরে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট করে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে— এমন আশঙ্কায় নেতাকর্মীরা সজাগ হয়ে উঠেন। তাই চলমান সংকটে নাশকতা ঠেকাতে মন্দির, গির্জা, সরকারি স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের বাড়ির সামনে পাহারায় বসেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বকশীগঞ্জ পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শাকিল তালুকদার ও সদস্য সচিব তানজির আহমেদ সুজনের নেতৃত্বে লাউচাপড়া খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় সাধু আন্দ্রে ধর্মপল্লি, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপ, মন্দির, বাড়িঘর এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারা দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতের নির্দেশে চলমান সংকটে নাশকতা ঠেকাতে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বকশীগঞ্জ পৌর যুবদল। বিএনপি নেতা মমতাজুর রহমান, যুবদল নেতা তৌহিদুজ্জামান, আশরাফ হোসেন মানিক, কালাম মিয়া, রাজিব মিয়া, মাহবুব আলম, আরাফাত রহমান রিপনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পুরো উপজেলায় টহল দেন যুবদল নেতা শাকিল তালুকদার। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি।
পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শাকিল তালুকদার বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের কাছে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ সমান। সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত নির্দেশ দিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষাসহ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী যে দলেরই হোক তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। তাই রাত জেগে নেতাকর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন। বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ যদি কোনো অপকর্ম করতে চায় তাকে ধরে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
যুবদল নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বকশীগঞ্জ হিন্দু কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ডা. সিদ্ধেস্বর সাহা বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গ্রাম পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও একটু হলেও মনে ভীতি ছিল। কারণ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নানাভাবে বাংলাদেশের সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সৃষ্টি করা হয়, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন সংখ্যালঘুরা। যুবদলের নেতাকর্মীরা মন্দির-গির্জা পাহারা দিচ্ছেন দেখে মনে হয়েছে এটিই বুঝি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনো অপশক্তি আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে।
এ ব্যাপারে বগারচর ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমাণিক মাসুম বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় পাহারা দেওয়ার জন্য গ্রাম পুলিশদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা যোগ হয়েছেন। এতে করে নিরাপত্তা বেষ্টনী অনেক মজবুত হয়েছে। দেশের সংকটময় মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সত্যিই প্রশংসনীয় কাজ। ধন্যবাদ জানাই তাদের যারা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন