ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে তীব্র স্রোতে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে কুমিল্লা জেলার ১৪টি উপজেলা প্লাবিত হওয়ার খবর দিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়। ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি। ক্ষণে ক্ষণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। লোকালয়ে হু হু করে ঢুকছে পানি। এতে দিশাহারা হয়ে ঘরবাড়ি ফেলে প্রাণে বাঁচতে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
এদিকে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই শহরবাসীর। কয়েক দিন ধরে কুমিল্লা শহরতলির শাহপুর, শুভপুর, চান্দপুর, কাপ্তানবাজার, ভাটপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। যে কোনো সময় গোমতীর বাঁধ ভেঙে শহরে পানি ঢুকতে পারে, এই ভয় তাদের।
উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহ না কমায় দিন দিন নতুন নতুন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে বন্যার পানি। দুদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হলেও বন্যার তীব্রতা কমেনি। নিম্নাঞ্চলে হু হু করে ঢুকছে বাদামি রঙের ঘোলাটে পানি।
নগরীর মোগলটুলি এলাকার বাসিন্দা সাদিক হোসেন মামুন কালবেলাকে বলেন, কয়েক দিন ধরে গোমতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তাদের নির্ঘুম রাত কাটে। গোমতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শহর রক্ষা বাঁধও নরম হয়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে লোকের এমন কথা শুনে ভয় লাগছে তাদের। তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি সেকেন্ড দুশ্চিন্তায় কাটছে। কখন না জানি নদী ভেঙে পানি ঢুকে যায়।
রোববার সরেজমিনে কুমিল্লার গোমতী নদীর বিবির বাজার, চানপুর ও ভাটপাড়া এলাকায় দেখা গেছে, নদীরক্ষা বাঁধে স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, পাঁচশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন। সবাই সচেতন হলে শহর রক্ষা বাঁধটিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী কালবেলাকে বলেন, ১৭টি উপজেলার মধ্যে চান্দিনা, হোমনা এবং মেঘনা উপজেলা বাদে বাকি ১৪টি উপজেলা তলিয়েছে বানের পানিতে। সরকারি হিসাবে জেলায় মোট ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৪২ জন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেসরকারি হিসেবে তা ১০ লাখের কাছাকাছি। চলমান বন্যায় জেলায় মোট ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সরকারিভাবে ১ হাজার ৮০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নগদ ৪৫ লাখ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, জেলাজুড়ে ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৫ হাজারের মতো বানভাসী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ হাজার ২৯২ পুরুষ, ২২ হাজার ১৯৭ নারী, ১২ হাজার ৫০৫ শিশু ও ২৮১ প্রতিবন্ধী আশ্রয় নিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ১ সেন্টিমিটার কমে তো আবার ১ সেন্টিমিটার বাড়ে। অর্থাৎ গোমতীর পানিপ্রবাহ অপরিবর্তিত রয়েছে। আমরা খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছি। পরিস্থিতি উন্নতি হতে সময় লাগবে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
মন্তব্য করুন