শেখ মমিন
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

রাজবাড়ীতে ত্রাস সৃষ্টি করা জিল্লুল ও তার ছেলে এখন পলাতক

সাবেক সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিম। ছবি : সংগৃহীত
সাবেক সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিম। ছবি : সংগৃহীত

রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে বাজবাড়ীতে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ উঠেছে।

কটানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা ধরনের অবৈধ কাজ ও অন্যায়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। এতদিন মুখ না খুললেও এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে জিল্লুল ও তার ছেলে মিতুলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

ক্ষমতার দাপটে তিনি নানা ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়েছেন। হত্যা, নির্যাতন, দখলবাজি, অর্থপাচারসহ নানান ধরনের অন্যায়ের অভিযোগ বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে তাদের সেই ত্রাসের রাজত্বের অবসান হয়।

১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার টিকিটে তিনি ৫ বার সংসদ সদস্য হন। এই সুযোগে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সন্ত্রাস ও ক্যাডার বাহিনী। নিজ এলাকায় চালিয়েছেন হরিলুট। বাবা-ছেলের ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, খুন হামলা ও মামলা থেকে রেহাই পাননি শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এমন কি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীও।

অভিযোগ আছে, জিল্লুর ও মিতুলের নির্দেশে তাদের ক্যাডার বাহিনীর হাতে তার নিজেরই অনেক নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন এবং অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন।

জানা যায়, এক সময় জিল্লুল হাকিম মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য মনোনয়ন কিনতে পারছিলেন না। অবৈধ উপায়ে এখন তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। ক্ষমতা ব্যবহার করে জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন আলিশান মার্কেট। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই পলাতক আছেন জিল্লুল ও তার ছেলে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে এতো দূর আসলেও দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করতেন তিনি। স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে একাধিক বার প্রার্থী দিয়েছেন এবং তাদের সমর্থন করেছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীকেও এলাকাচ্যুত করে রেখেছিলেন তিনি। এখন বাবা-ছেলের পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন রাজবাড়ী-২ আসনের বাসিন্দারা। তাদের নির্যাতনে এলাকা ছাড়া মানুষ ৫ আগস্টের পর থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য জিল্লুল মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ার উপক্রম হয়েছিল। সেই তিনিই এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। অভিযোগ রয়েছে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার দপ্তরি নিয়োগ থেকে শুরু করে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং অন্যান্য সরকারি অফিস থেকে ১৫ শতাংশ করে কমিশন নিতেন তিনি। সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে অনেক যুবকের কাছ থেকে অর্থ নিয়েও করেছেন প্রতারণা। তাদের চাকরি তো দেননি, টাকাও ফেরত দেননি।

পাংশা বয়রাট মাজাইল ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, মাদ্রাসার সহকারী একটি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে জিল্লুল অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে চায়। আমি সেই কাগজে স্বাক্ষর না করার কারণে আমাকে অফিসে আটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে আমার বেতন ভাতা বন্ধ করে রেখেছে। আমি তার কাছে বছরের পর বছর ঘুরেছি। এটা নিয়ে কোনো সমাধান করেনি। বরং যখনই তার কাছে গিয়েছি তখনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও তার ছেলের ক্যাডার বাহিনী আমার ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। এ ১১ বছর ধরে আমার পরিবার নিয়ে আমি খুব অসহায়ভাবে মানবতার জীবনযাপন করেছি। আমি জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিম ও তাদের ক্যাডার মাস্তানদের বিচার চাই।

পাংশা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমার ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়। এ হামলার নির্দেশদাতা জিল্লুল ও তার ছেলে মিতুল। আমি এ হামলার বিচার চাই। আর এ ঘটনার কারণেই আমার বাবা মারা গেছেন। বর্তমান সরকারের কাছে আমার দাবি এই সন্ত্রাসী বাবা ও তার ছেলেকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। এ কারণে আমার পরিবার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো তাদের ভয়ে রয়েছে আমার পরিবার, কারণ তাদের অসংখ্য ক্যাডার বাহিনী আছে। আমি এখনো ঠিক মতো হাঁটতে পারি না, আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমার শরীরে এখনো বারো জায়গায় ভাঙা আছে।

পাংশা বাগদুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক, এস এম আতাউল্লাহ শামীম রহমান কালবেলাকে বলেন, রাজনৈতিক রোষানলে আমার ওপর হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য ষড়যন্ত্র করে এবং ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট রাতে জিল্লুল এবং তার ছেলের নেতৃত্বে আমাকে হত্যা করার জন্য তাদের মোটরসাইকেল বাহিনী এসে আমাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। আমার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। একমাত্র আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে। এখন সময় এসেছে এই সন্ত্রাসী বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে আমি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি চাই, এদের অতি দ্রুতই শাস্তির আওতায় আনা হোক। জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিম তাদের ক্যাডার বাহিনীদের গোপন অস্ত্র দিয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি। তবে যেসব হত্যাকাণ্ড জিল্লুল ও তার ছেলে করেছে এ জন্য তাদের দুজনের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া দরকার।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে, জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিমের ফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া য়ায়নি।

বর্তমান সরকারের কাছে ত্রাসের রাজত্বের কায়েমকারী এই বাবা ও ছেলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার চতুর্থ সারির ক্লাবের কাছে হেরে ম্যানইউর বিদায়

ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলো ৩ ইউনিয়নের মানুষ

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশ স্পিনার

রুমিন ফারহানার দুঃখ প্রকাশ

বৃহস্পতিবার প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা

ভারতে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া, বড় ধাক্কায় আইপিএল ও ভারতীয় ক্রিকেট

পদক্ষেপ নিলে মনে হয় দেশেই থাকা হবে না : ডিসি মাসুদ

রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সভা

ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১–এর কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব অপরিহার্য: উপদেষ্টা

১০

কনভেনশন হলে গেরিলা বৈঠকে গ্রেপ্তার শিমুল ৪ দিনের রিমান্ডে

১১

শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’

১২

ইনকিলাব সম্পাদককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাল ছাত্রশিবির

১৩

বিএনপি নেতাকে কোপাল যুবলীগ নেতা

১৪

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হাটহাজারী বিমানবন্দর

১৫

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৬

ডাকসু নির্বাচন / ১৩২ শিক্ষার্থীকে খাওয়ালেন প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা বললেন আচরণবিধি লঙ্ঘন

১৭

সাদাপাথর লুটপাট নিয়ে সিলেটে গণশুনানি

১৮

একাধিক উপকারিতা কাঠবাদামের, যাদের জন্য ক্ষতিকর

১৯

একই দিনে দুইবার পরিবর্তন, রাকসু নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ

২০
X