বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে সাগর। গতকাল শুক্রবার সাগরে ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে কক্সবাজার উপকূলে ৬টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ৩ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের। জলাবদ্ধতার কারণে এখনে পানিবন্দি অর্ধশত গ্রামের মানুষ। জেলা প্রশাসন বলছে, যেসব এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে সেখানে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, কক্সবাজারে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত আরও কমে আসবে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার চট্টগ্রাম মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দেওয়া তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত রয়েছে। সাগরে অবস্থান করা সব ধরনের মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদে চলে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর এবং বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লাবণী চ্যানেল ও ইনানী পয়েন্টে ঝোড়ো বাতাসের কবলে পড়ে ৬টি ট্রলার ডুবে যায়। পরে এসব ট্রলার ভেসে গিয়ে সমুদ্রসৈকতের কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে আসে। এর মধ্যে কক্সবাজার শহরের লাবণী চ্যানেলে এফবি রশিদা নামে একটি এবং ইনানী পয়েন্টে ৫টি ফিশিং ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এসব ট্রলারে থাকা মাঝি-মাল্লারা কূলে উঠতে পারলেও ৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদ জামাল (৩৭) ও নুরুল আমিন নামে দুই জেলে সাগরে ডুবে মারা গেছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার শহরের নাজিরার টেক পয়েন্ট থেকে স্থানীয়রা একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। তবে তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল।
জেলের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) তানভির হোসেন ও ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ।
কক্সবাজার জেলার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সাগর উত্তাল ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৬৫টি ট্রলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। তবে শনিবার সকালে সব ট্রলার ফিরে আসার খবর পাওয়া গেলেও কক্সবাজার সদর এলাকার তিনটি মাছ ধরার ট্রলার ৬৪ মাঝিমাল্লাসহ নিয়ে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারের জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, দুদিনের টানা বৃষ্টিতে এই ওয়ার্ডের ১০ হাজার মানুষের ক্ষতি হয়েছে। আরও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই ওয়ার্ডে ৮০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ অচল হয়ে যাবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। আপাতত যেখানে সমস্যা রয়েছে সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন