আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুনর্বাসন কেন্দ্রে টইটম্বুর, পথেই কাটছে জীবন

চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় ফুল বিক্রিতে ব্যস্ত ৫ বছরের মরিয়ম। ছবি : মোহাম্মদ সুমন।
চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় ফুল বিক্রিতে ব্যস্ত ৫ বছরের মরিয়ম। ছবি : মোহাম্মদ সুমন।

১৪ বছরের শিশু জালাল (ছদ্মনাম)। এই বয়সে খেলার মাঠে ছোটাছুটি কিংবা বই নিয়ে পড়ার টেবিলে থাকার কথা তার। কিন্তু জালালের গল্পটা ভিন্ন। তার রাত কাটে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের আশপাশে। দিনে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুধার জ্বালায় কখনো ফুল ফেরি করে, কখনো হাত পাতে মানুষের কাছে। মা-বাবা কোথায়, জানা নেই তার। সোজা কথায় জীবনের ফড়িং-দোয়েলের সঙ্গে যেন দেখা হয়নি জালালের।

শুধুই কি জালাল? জালালের মতো চট্টগ্রাম শহরে ঠিকানাবিহীন ঘুরে বেড়ায় তার বন্ধু আবদুল্লাহ, মিম এবং সবুজ। বয়সটা ভিন্ন ভিন্ন হলেও নিয়তি তাদের দাঁড় করিয়েছে একই কাতারে। মা-বাবা, পরিবার, ঘরবাড়ি, ঠিকানা কিছুই নেই। নেই জীবনের নিশ্চয়তা। আলো-আঁধারের দোলাচলে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কাজে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযোগ উঠছে ছিঁচকে চুরির। এভাবে জালাল, আবদুল্লাহ, সবুজের মতো চট্টগ্রাম নগরীতে পথশিশুর সংখ্যা কত—তার সঠিক হিসাবও নেই সমাজসেবা অধিদপ্তরে।

তবে প্রায় এক যুগ আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে গড়ে তোলা হয়েছিল সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র। ২০০ আসনের ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে ২০৪ শিশুর। ওই কেন্দ্রে এখন নতুন করে শিশুদের ঠাঁই দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জালাল কালবেলাকে বলে, ‘আমার বাড়ি কুমিল্লায়। সাত বছর আগে মা মারা যায়। কিছুদিন পর বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। নতুন মা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর নানুর কাছে ছিলাম। সেখানেও সবাই মারধর করত। পরে ট্রেনে চট্টগ্রামে আসি। মাঝেমধ্যে সিআরবিতে ফুল বিক্রি করি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, পরিত্যক্ত শিশু, অভিভাবকহীন শিশুসহ পথশিশুদের জন্য ২০১২ সালে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদে খোলা হয় সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র। সেখানে মোট ২০০ আসন রয়েছে। ১০০ আসন বরাদ্দ মেয়ে শিশুদের জন্য এবং ১০০ আসন বরাদ্দ ছেলে শিশুদের জন্য। ২০০ আসনে ২০৪ জন শিশু আশ্রয় নিয়েছে। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৯৯৭ শিশু প্রশিক্ষণ শেষে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে।

মূলত ‘চাইল্ড সেনসেটিভ সোশ্যাল প্রকেটশন ইন বাংলাদেশ’ (সিএসপিবি) নামে একটি প্রকল্পের আওতায় পথশিশুসহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। তবে পথশিশুদের জন্য ডেডিকেটেড কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই চট্টগ্রামে। অন্যদিকে, পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকতে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করে।

সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক জেসমিন আক্তার কালবেলাকে বলেন, এখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের রাখা হয়। অনেকের মা-বাবা নেই। আবার অনেকেই পরিত্যক্ত হয়েছে। অনেক পথশিশুও আছে। তবে আমাদের সমস্যা হয় যখন তারা এখানে থাকতে চায় না। কারণ অনেকেই মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এখানে সুশৃঙ্খলভাবে থাকতে তারা পছন্দ করে না।

মূলত চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকা, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন, সিআরবি, ষোলশহর, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় পথশিশুরা। তাদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবন, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কাজে। অনেকেই আবার কাজ করছে হোটেল কিংবা কারখানায়। চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পথশিশুদের সমাজের মূল স্রোতে আনতে কাজ করছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকেই পুলিশের হাতে আটকও হয়।

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ১৬ বছর ধরে পথশিশু সুরক্ষায় কাজ করছেন মনোয়ারা বেগম রিমঝিম। সম্প্রতি পথশিশুদের নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত এ সমাজকর্মীর ভাষ্য মতে, পথশিশুদের সুরক্ষায় প্রয়োজন সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

মনোয়ারা বেগম কালবেলাকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দেখি চুরিসহ নানা অপরাধমূলক কাজে যখন কোনো শিশুকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাদের ডাকে। কিন্তু আমরা চাইলেই ওই শিশুকে পুনর্বাসন কিংবা মূল স্রোতে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা শুরু করতে পারি না। কারণ এখানে অনেক বিষয় জড়িত আছে। আমি মনে করি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাজেক থেকে ক্যাম্পাসে ফেরা হলো না খুবি ছাত্রীর

ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ৩৮ বাংলাদেশির সন্ধান মিলেছে

বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উদ্ধার

এশিয়া কাপে পাকিস্তানি ফিল্ডারের থ্রোয়ে আহত আম্পায়ার

‘ভুল করে মায়ের পাসপোর্ট নিয়ে জেদ্দায় যান পাইলট মুনতাসির’

শাহীনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সুপার ফোরে পাকিস্তান

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ

এশিয়া কাপে পাকিস্তান ওপেনারের লজ্জার রেকর্ড

চট্টগ্রামে আ.লীগ কর্মীদের বাসা ভাড়া না দিতে মাইকিং

ভারতে ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ সংক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু

১০

বনানীতে দুই শিসা বারে ডিএনসির অভিযান

১১

বয়কটের হুমকি দিয়েও না করার কারণ জানালেন পিসিবি প্রধান

১২

কর্মচারী দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা পরিচালনার অভিযোগ

১৩

শাহীন ঝড়ে বাঁচা-মরার ম্যাচে লড়াকু সংগ্রহ পাকিস্তানের

১৪

‘গোলাপী খালার’ পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

১৫

পরাজিত শক্তির সঙ্গে আঁতাতের রাজনীতি মঙ্গলজনক হবে না: নীরব

১৬

চট্টগ্রামে মার্কিন বিমান ও সেনা উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার কারণ কী?

১৭

রাকসু নির্বাচন / ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনাসহ ৭ দফা দাবি ছাত্রশিবিরের

১৮

দীর্ঘ ৬ বছর পর বুটেক্সে ক্যারিয়ার ফেয়ার অনুষ্ঠিত

১৯

ফ্যাসিবাদের মতো তামাকও দেশ থেকে নির্মূল করতে হবে : ফরিদা আখতার

২০
X