মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বিওসি টিলা ক্যাম্প বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৫টি চোরাই মহিষ আটক করলেও পরে তা জনপ্রতিনিধির সুপারিশে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিকেল তিনটার সময় সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পানিধার এলাকা থেকে মহিষগুলো আটক করে বিজিবি। আটকের পর অভিযানে থাকা বিজিবির এক কর্মকর্তা মহিষগুলো চোরাই বলে স্বীকারও করেন।
আরও পড়ুন : স্বর্ণ পাচারে সীমান্তে ভাই ভাই সিন্ডিকেট
স্থানীয়দের অভিযোগ, মহিষগুলো আটকের ঘণ্টাখানেক পর এক জনপ্রতিনিধিকে ব্যবহার করে চোরাকারবারিরাই বিজিবির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে।
অবশ্য বিজিবি বলছে, একজন জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে মহিষগুলোর মালিকানা (গৃহপালিত) দাবি করায় তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই জনপ্রতিনিধির নাম জানায়নি বিজিবি। এদিকে চোরাই মহিষ আটকের পর জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় সীমান্ত থেকে এলাকা থেকে চোরাই মহিষ আটক করা হলেও কৌশলে বিজিবির কাছ থেকে তা ছাড়িয়ে নেয় চোরাকারবারিরা। ফলে মহিষ পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৩টার সময় ভারতীয় চোরাই মহিষের একটি চালান পাচারের উদ্দেশে চোরাকারাবারিরা বড়লেখা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের (বিয়ানীবাজার) আওতাধীন বিওসি টিলা ক্যাম্প বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালায়। এসময় সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকা থেকে ৫টি মহিষ আটক করে বিজিবি। পরে বিজিবি সদস্যরা মহিষগুলো কাঠালতলী বাজারের দিকে নিয়ে যায়।
এসময় বিজিবির সার্জেন্ট পরিচয় দিয়ে জিল্লুর নামে বিজিবির এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, মহিষগুলো চোরাই। আমরা সোর্স লাগিয়ে আটক করেছি। পাহাড়ে আরও কয়েকটি মহিষ আছে। এসময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, আটক মহিষগুলো লুৎফুর ও সুনাম নামে দুই চোরাকারবারির। এদিকে বিজিবির আটকের এক ঘণ্টা মধ্যে এক জনপ্রতিনিধির প্রত্যেয়নে মহিষগুলো মালিকানা দাবি করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছে, চোরাকারবারিরাই ওই জনপ্রতিনিধিকে ব্যবহার করে মহিষগুলো ছাড়িয়ে নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, চোরাকারবারিরা বেশ কয়েকটি ভারতীয় মহিষ পাচারের উদ্দেশে সীমান্তের ওপার থেকে নিয়ে আসে। তবে বিজিবি মাত্র ৫টা মহিষ আটক করেছে। বাকি মহিষগুলো চোরাকারবারিরা কৌশলে সরিয়ে নিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, মহিষপাচারের নিরাপদ রোট হিসেবে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই-পাখিয়ালা সড়ক ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ্যে মহিষ পাচার করা হচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্টরা (বিজিবি) তা দেখেও না দেখার ভান করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাঝেমধ্যে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল দল গরু-মহিষ উদ্ধার করলেও চোরাকারবারিরাই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে গরু-মহিষ ও চোরাই পণ্য পাচার বন্ধ হচ্ছে না।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, মহিষগুলো কারও গৃহপালিত হলে বিজিবি তা আটক করবে কেন? যদি তা চোরাই না হয় তবে বিজিবি গৃহপালিত মহিষ এভাবে হয়ত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আটক করেছে। যার কারণে জনপ্রতিনিধির প্রত্যেয়নে ছেড়ে দিয়েছে। এটা একধরনের হয়রানি বলে আমি মনে করি। এই ঘটনায় বিজিবির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নইলে বিজিবি এভাবে মানুষকে হয়রানি করবে।
তিনি বলেন, আর মহিষগুলো চোরাই হলে বিজিবি তা জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে ছেড়ে দেবে কেন? নাকি বিজিবি অন্য কোনো সুবিধা নিয়ে মহিষগুলো ছেড়ে দিয়েছে? যদি তাই হয়, তবে এ ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার। নাইলে মহিষ পাচার কখনও বন্ধ হবে না।
এ বিষয়ে বিজিবির বিওসি টিলা ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মো. সিরাজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, বিজিবি ৫টা মহিষ আটক করেছিল। পরে এক জনপ্রতিনিধির প্রত্যেয়নে মহিষগুলো মালিকানা (গৃহপালিত) দাবি করায় তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মহিষগুলো চোরাই ছিল (আপনার এক কর্মকর্তার বক্তব্য মতে) এবং চোরাকারবারিরাই তা ছাড়িয়ে নিয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজিবি সদস্যরা কোনো অনৈতিক কাজ করে না। তবে কোন জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে মহিষগুলো ছেড়েছেন- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি সংযোগ কেটে দেন।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের (বিয়ানীবাজার) অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহিব্বুল ইসলাম খানের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তা রিসিভি করেননি তিনি।
মন্তব্য করুন