চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০২ পিএম
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের এমডি ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান। ছবি : সংগৃহীত
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের এমডি ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান। ছবি : সংগৃহীত

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। গত ২০১৮ সালেও আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছিল পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। আওয়ামী লীগের শাসনামলে এ কোম্পানিটি দলখ করে নিয়েছিল বাংলাদেশের জাহাজ শিল্প।

খাতটি থেকে তখন যে পরিমাণে রপ্তানি আয় হয়েছে, তার ৮৯ শতাংশ এসেছে প্রতিষ্ঠানটি থেকে। কিন্তু দেশের সুনাম তখন বাড়লেও তারা খালি করে ফেলে ব্যাংকের তলা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মামলা।

শুধু ব্যাংক এশিয়াতেই রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ৫০৬ কোটি টাকার ঋণ। এসব টাকা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে এক আদেশে ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান।

অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রোজাউল করিম বলেন, ব্যাংক এশিয়ার ৫০৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মামলায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের এমডি ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানের বিরুদ্ধে এই দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

শুধু ব্যাংক এশিয়াই নয়, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের অন্যতম এই জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পদ এর আগে ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর নিলামে তোলে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার পক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এই নিলাম নোটিশ।

রোজাউল করিম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে আনুমানিক ২০০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা রয়েছে। বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য অত্যন্ত নগণ্য। তারা ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে ঘোষিত শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির মধ্যে অন্যতম। খেলাপি ঋণের দায় স্বীকার করলেও দায় পরিশোধে এগিয়ে আসছেন না তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হতো পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে দফায় দফায় ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটি পরিণত হয় দেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানে। এর আগে ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নাম। সাবেক অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তখন প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা খেলাপি। ঢাকা ব্যাংক ছাড়াও ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কাছে তখন ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ব্যাংক এশিয়ার ৫০৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রবেশ করে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। মান সম্পন্ন সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ছড়িয়ে পড়ে তাদের সুনাম। নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, কেনিয়া, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতসহ বিশ্বের ১২টি দেশে ৩৩টি জাহাজ রপ্তানি করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিকের। তবে ২০২০ সালের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির ঘাড়ে জমা হয় বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা। এছাড়া কোভিড মহামারির ধাক্কাও তীব্রভাবে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির ওপর।

অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রোজাউল করিম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা দেশত্যাগের পাঁয়তারা করছেন। বিবাদীগণ দেশত্যাগ করতে পারলে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিবাদীগণের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের প্রার্থনা করে ব্যাংক এশিয়া। তবে আইনজীবী জানান ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ডাউন পেমেন্টের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তবে তারা দেশত্যাগ করবেন না। তারা জাহাজ নির্মাণ খাতের সফল উদ্যোক্তা। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলে বিবাদীগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫০৫ কোটি ৯০ লাখ ১ হাজার ৯২৪ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর ঋণ খেলাপির মামলা করে ব্যাংক এশিয়ার আগ্রাবাদ শাখা। পরে ৬ নম্বর বিবাদী লিখিত বর্ণনা দাখিল করেন। বাদী ব্যাংকের সঙ্গে আপস মীমাংসায় নালিশি ঋণ পরিশোধের জন্য বিগত দেড় বছর ধরে সময়ের আবেদন করছেন। আপস মীমাংসার অংশ হিসেবে ৬নং বিবাদী ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। অন্য বিবাদীগণ এখন পর্যন্ত মামলায় হাজির হননি। আপসে দায় নিস্পত্তির জন্য যথেষ্ট সময় প্রদান করা হলেও প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট প্রদান করেননি। আংশিক ডাউন পেমেন্ট প্রদান করে ৬নং বিবাদী নালিশি ঋণের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু দায় পরিশোধে সদিচ্ছা দেখাননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম কি স্বাভাবিক হল?

‘তারুণ্যের শক্তিই দেশি—বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেবে’

তেঁতুলিয়া সীমান্তে নারীসহ আটক ৫ বাংলাদেশি

কাজ করছেনা ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম

ভাসানী এক মহীরুহের অগ্নিক্ষরা সংগ্রামী জীবন : বাংলাদেশ ন্যাপ

ট্রাকচাপায় নিহত ২ মোটরসাইকেল আরোহী

নির্বাচনের আগে দুটি বিষয়ের সমাধান চান জামায়াত আমির

আসিফ নজরুলকে ‘র’ এজেন্ট বলায় আসিফ মাহমুদের প্রতিক্রিয়া

আপনাদের স্বার্থ নিয়ে থাকেন, ভারতকে মো. শাহজাহান

শিশুকে ‘ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষককেও’ পিটিয়ে মারলেন এলাকাবাসী

১০

বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি

১১

নওগাঁয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ

১২

‘দেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে তারেক রহমান কাজ করছেন’

১৩

দামেস্কের কাছে পৌঁছে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী

১৪

এনআইডি করতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারীসহ আটক ৩

১৫

কলকাতায় হাহাকার, বাংলাদেশিদের অভাবে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা

১৬

আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানের কাছে মিরাজ

১৭

লংমার্চে লাখো নেতাকর্মীর ঢল / ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেওয়ার প্রত্যয় বিএনপির তিন সংগঠনের 

১৮

চাটমোহরে ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

১৯

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে সরে দাঁড়ালে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে পিসিবি

২০
X