কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যে বাজারে বিক্রেতা পুরুষ হলেও ক্রেতারা নারী

বাজারের কেনাকাটা করছেন নারীরা। ছবি : কালবেলা
বাজারের কেনাকাটা করছেন নারীরা। ছবি : কালবেলা

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় একটি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন। নাম ছাতিরচর। বর্ষায় যে গ্রামে পর্যটকদের ঢল নামে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জমজমাট সেই গ্রামের বাজারে সকল বিক্রেতা পুরুষ হলেও ক্রেতা সকলেই নারী। এ কারণে গ্রামের মানুষ নাম দিয়েছেন নারীদের বাজার।

বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজারে মাছ, শাকসবজিসহ নিত্যপণ্য নিয়ে ছুটে আসেন দোকানিরা। একটি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা এই ইউনিয়নের চারদিকে নদী। ঘোড়াউত্রা নদী ঘেঁষা এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হাওরে মাছ শিকার করে থাকেন। তাই পুরুষরা ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েন। মাছ ধরাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় বাজার করা থেকে রান্নাবান্না সবকিছু নারীদের সামলাতে হয়।

নারী ক্রেতা ফাতেমা আক্তার বলেন, ছাতিরচরের এই বাজারটি মহিলাদের। এখানে পুরুষ ক্রেতা এসে জায়গা পান না। আমার সংসারের পুরুষ লোক সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার হিলচিয়া এলাকায় কাজে চলে গেছে। আরেকবার বাসায় এসে রাতে খাওয়াদাওয়া করবে। তাই বাজার করতে আসছি।

মীম আক্তার জুঁই নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা ও ভাই ঢাকায় থাকে। পরিবারের পুরুষ সদস্য বাড়িতে না থাকায় স্কুল শেষে বাজার করে বাড়িতে নিয়ে যাই। এ ছাড়া গ্রামের সকল পুরুষ পেশায় মৎস্যজীবী। সকালেই তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়।

খোদেজা খাতুন নামে এক নারী বলেন, আমার পরিবারের সকল পুরুষ ঢাকা ও চট্টগ্রাম থাকেন। পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। বাজার করার জন্য তাই আমাকেই আসতে হয়। আজকে বাজার করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল দিয়ে পরে বাড়ি যাব। এই বাজারে মহিলা ক্রেতাই বেশি। কারণ পুরুষ লোক কেউ বাড়িতে থাকে না।

রজব আলী বলেন, ভোর সকালে খাবার নিয়ে হাওরে চলে যাই। দুপুরে ওইখানে খাওয়া দাওয়া করি। এর ফাঁকে নারীরা বাজার করে নিয়ে যায়। আরেকবার সন্ধ্যায় এসে খাবার খায়। বাজার করার মতো সময় পাওয়া যায় না।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহাব বলেন, এই বাজারে নারীদের জন্য আসতে পারি না। এখানে পুরুষ বিক্রেতা হলেও ক্রেতা সকলেই নারী। তাই গ্রামের মানুষ এই বাজারকে নারীদের বাজার বলে ডাকেন। শুধু বাজার করা না সংসারের সকল কাজ নারীদের করতে হয়ে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি সকল কিছু নারীদের দেখাশোনা করতে হয়।

ব্যবসায়ী মো. সুলতান বলেন, প্রতিদিন আমি এখানে পান বিক্রি করতে আসি। আমার বাড়ি গুরুই ইউনিয়নে। এখানকার ক্রেতা সবাই নারী। পুরুষরা বাহিরে কাজে চলে যায়। ভালো বিক্রি হয়। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই বাজার জমজমাট থাকে। এরপর ক্রেতার সংখ্যা কমে যায়। বাজার করার পর মহিলারা তাদের অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।

ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামসুজ্জামান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ভাঙনকবলিত এই ইউনিয়নটি প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা নিয়ে গঠিত। একটি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নে ২০ হাজারেরও অধিক মানুষের বসবাস। এই ইউনিয়নের প্রায় সকল মানুষের পেশা মৎস্যজীবী। বাজারটির কোনো ইজারা নেই। অলিখিতভাবে বাজারটির দেখাশোনা করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। বাজারের অধিকাংশ ক্রেতা নারী। নারীদের নিরাপত্তার এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা না থাকলেও পরিচালনার জন্য একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি। কমিটি থাকলে বাজারের উন্নয়নে কাজ করা সহজ হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ / রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে তালা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ 

যেসব লক্ষণ বলে দেয় আপনার সঙ্গী আপনার জন্য সঠিক নয়

ডাস্টার দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রীকে রক্তাক্ত করলেন প্রধান শিক্ষক

শাপলা চত্বর হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাইব্যুনাল

ছোট বাথরুমকে বড় দেখানোর সহজ কিছু উপায়

অস্কার মনোনীত অভিনেত্রী স্যালি গেলেন না ফেরার দেশে

ড. ইউনূসের দ্বৈত দায়িত্বে ‘স্বার্থের সংঘাত’ দেখছেন সালাহউদ্দিন

বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের চাহিদা

বৃহস্পতিবার খোলা থাকবে শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান : মালিক সমিতি

আমীর খসরুর আসনে লড়তে চান এনসিপি নেতা যুবরাজ 

১০

‘যারা জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে’

১১

রাজধানীতে পুলিশের গাড়িতে আগুন

১২

কপ৩০ সম্মেলন / জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকাতে ব্রাজিলের চেষ্টা

১৩

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর / ‘বাংলার মানুষ কাঁদো, ভোলার গাছে গাছে ঝুলছে মানুষের লাশ’

১৪

সব জায়গায় একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার কতটা ঝুঁকি

১৫

সৌদিতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ

১৬

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বিসিবিকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য গামিনির

১৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের আগুন

১৮

অক্টোবরে সড়কে ঝরেছে ৪৬৯ প্রাণ

১৯

যা আগে ক্রিকেটে দেখা যায়নি, তা ঘটবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে

২০
X