লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অবুঝ তাজকিয়া খুঁজে ফিরছে বাবাকে

অবুঝ সন্তান তাজকিয়াকে কোলে নিয়ে নিহত আইনজীবী সাইফুল। ছবি : সংগৃহীত
অবুঝ সন্তান তাজকিয়াকে কোলে নিয়ে নিহত আইনজীবী সাইফুল। ছবি : সংগৃহীত

আড়াই বছরের শিশু কন্যা তাজকিয়া। মাত্রই কথা বলতে এবং একপা-দুপা করে হাঁটতে শিখেছে। দুনিয়ার অনেক কিছু তার এখনো অজানা। তবুও তার চোখে যেন বাবাকে দেখার এক ধরনের ক্ষুধা। বাবা, বাবা করে খুঁজে ফেরে সে সারাটাদিন। সপ্তাহে দুএকবার দেখা হতো বাবার সঙ্গে। বড়ই আনন্দে দিন কাটছিল তার।

তবে গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চালানো সংঘর্ষে যেন নিমিষেই তার জীবনের সব আনন্দ শেষ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে তাজকিয়ার বাবাকে।

সেই সঙ্গে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে লোহাগাড়া সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। লোহাগাড়া সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল থেকে অপরাধীদের বিচার দাবি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভকারীরা বলেন আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই, জবাব চাই স্লোগান দিতে থাকেন।

এ ছাড়াও নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বাড়ি লোহাগাড়া সদর সওদাগর পাড়ায়ও আত্মীয়স্বজন ভিড় করে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বড় ভাই তারেকুল ইসলাম বলেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের সঙ্গে তার বোন তারিনের বিয়ে হয় সাড়ে তিন বছর আগে।

তাদের পরিবারে তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যা সন্তান আছে এবং তারিন এখন ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা। স্বামীকে সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করেছে এ খবর শোনার পর থেকেই হুঁশ হারিয়েছেন তারিন। তার ভবিষ্যৎ কী হবে, তার সন্তানদের কী হবে এসব ভেবে তারিনের চোখে এখন ঘোর অমানিশা।

তিনি আরও বলেন, খুনিরা আমার বোনের জামাইকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে তুখোড় মেধাবী ছিলেন সাইফুল। জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাস করেছিলেন আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে। সাইফুল শুধু মেধাবী না- অত্যন্ত অনুগত ছাত্র ছিলেন। তাকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করবেন বলেই হয়ত বহু গুণে গুণান্বিত ছিল সে। মাদ্রাসার সব শিক্ষকের কাছে প্রিয় ছাত্র ছিলেন সাইফুল।

নিহত সাইফুলের বন্ধু মোহাম্মদ আরমান বলেন, বন্ধু আমার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে ইন্টারমিডিয়েট পড়ে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। সেখান থেকে লেখাপড়া শেষ করে। পরে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাস করে আইন পেশায় নিযুক্ত হয়। অন্যান্য বন্ধুদের চেয়ে সাইফুল ছিল আলাদা। তার সামনে কোনো অন্যায়ে সে চুপ থাকতো না, তার প্রতিবাদ করতো। নিয়মিত নামাজ আদায় করত এবং খুবই মিশুক ছিল। ঘটে যাওয়া এ ঘটনা এখনো মানতে পারছি না।

নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের পিতা জামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, আমার ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সাইফুল ছিল ৩য় সন্তান। আমার ছেলে নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিল। তাহাজ্জুদ নামাজও বাদ যেত না তার।

তিনি বলেন, আমার ছেলে এভাবে আমার আগে চলে যাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। বিনা অপরাধে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের জানাজার নামাজ চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে বুধবার বেলা ১১টায় এবং গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে বাদ জোহর দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিনেমায় বাঙালিয়ানা কোথায়: রঞ্জিত মল্লিক

দেশে কতবার গণভোট হয়েছে, কেমন ছিল ফলাফল

ট্রাম্পকে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা দেবে ইসরায়েল

শিক্ষা ভবনের সামনে ৭ কলেজ শিক্ষার্থীরা, যান চলাচল বন্ধ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে কি না জানালেন প্রেস সচিব

আগামী সংসদের ওপর পিআর ইস্যু ছেড়ে দিতে বললেন মির্জা ফখরুল

দাবি মিজানুর রহমানের / বরিশালের হয়ে বিপিএল খেলবেন তামিম!

ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, কিস্তির গ্যাঁড়াকলে জেলেরা দিশেহারা

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল আরও এক দেশ

১০

দরিয়া-ই-নূর যেভাবে বাংলাদেশে

১১

স্কুলে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নিয়ে ২ শিক্ষকের মারামারি

১২

টাকা ছাড়া ফেরিতে গাড়ি উঠতে দেয় না বিআইডব্লিউটিসির লস্কররা!

১৩

যে সাত ইসরায়েলি মুক্তি পেলেন

১৪

জুটি বাঁধছেন বিজয়-কীর্তি

১৫

শিক্ষা ভবন অভিমুখে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

১৬

বিপিএলে অংশ নিতে আয়োজকদের যে শর্ত দিল বরিশাল

১৭

সাত ইসরায়েলি বন্দি হস্তান্তর, মুক্তির অপেক্ষায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি

১৮

রাজধানীতে শ্রমিক লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫

১৯

সফল মানুষ অফিস শেষের ১০ মিনিটে যা করেন

২০
X