নোয়াখালী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মাকে না জানিয়েই আন্দোলনে, গুলিতে খুলি উড়ে যায় রিজভীর

ছাত্র আন্দোলনে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভী। ছবি : সংগৃহীত
ছাত্র আন্দোলনে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভী। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এক অদম্য সাহসের নাম ছিল মাহমুদুল হাসান রিজভী। এই তরুণ বীর শহীদ সবার কাছে রিজভী নামেই পরিচিত। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

নোয়াখালীর মাইজদী শহরের ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় তার শোকাহত মা-ভাইয়ের সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে সেই ছেলে হারানোর কাহিনি জানালেন মা। মা শোনালেন রিজভী কীভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এতটা সাহসী হয়ে উঠল। রিজভী নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের মৌলভী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে।

ছোটবেলা থেকে রিজভী ছিল পরোপকারী। মা ফরিদা ইয়াছমিন গৃহিণী, বাবা জামাল উদ্দিন এনজিও সংস্থার আশা ব্যাংকের ম্যানেজার। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে রিজভী ছিল সবার বড়। পরিবারের অনেক আদরের ছিল রিজভী। তাকে ঘিরেই ছিল পরিবারের সব স্বপ্ন। ওর ওপর ভরসা করেই বেঁচে ছিল মা-বাবা। পরিবারের অভাব-অনটন থাকলেও মা-বাবা তার পড়ালেখার জন্য ছিলেন উন্মুখ। ২০ বছরের তরুণ রিজভী লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড থেকে অষ্টম সেমিস্টার শেষ করেছিলেন। এরপর তাকে ইন্টার্ন করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। চেয়েছিলেন পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন। এর মধ্যে ঢাকাতে শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন।

রিজভীর মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার উত্তরা-পূর্ব থানার সামনে হাইওয়ে রোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাথার মগজ বের হয়ে রাস্তায় পড়ে। তখন রিজভী রাস্তায় পড়ে কই মাছের মতো ছটফট করতে থাকে। ফ্লাইওভারের ওপর থেকে তাকে গুলি করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার উত্তরা কিচিন হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত ১০টার দিকে মারা যান। ঢাকায় জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে আমি তাকে ফোন দিয়ে সাবধানে থাকতে বলতাম। ফোনে রিজভী আমাকে আশ্বস্ত করে সে কোনো আন্দোলনে যায় না। কিন্তু ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি জানতে পারি আমাদের অগোচরে ছেলে আন্দোলনে যেত।

ফরিদা ইয়াছমিন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রিজভীকে তার বন্ধুরা নিয়ে যায় উত্তরা কিচিন হসপিটালে। তাৎক্ষণিক ওই হসপিটালে পায়নি কোনো চিকিৎসা। এমনকি ছেলের লাশ দেখে হসপিটালে কান্নাও করতে পারিনি আমি। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে অনেকটা গোপনে তার মরদেহ নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় তার মরদেহ নেওয়া যায়নি হাতিয়ার নিজ বাড়িতে। অনেকটা নীরবে নিভৃতে সমাহিত করা হয় হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের পূর্ব মোহাম্মদপুর গ্রামের নানার বাড়ির কবরস্থানে।

শহীদ রিজভীর ছোট ভাই শাহরিয়ার হাসান রিমন বলেন, দেশের স্বার্থে কখনো যদি প্রয়োজন হয় আমিও যাবো আন্দোলনে। তবুও জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লব যেন স্বার্থক হয় এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের পরিবারের।

এ ঘটনায় নিহতের মা উত্তরা থানায় একটি মামলা করেন। আসামিরা নানাভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে শুনছেন রিজভীর মা। এজন্য তিনি আল্লার কাছে চাইলেন ছেলে হত্যার বিচার। পরিবারের আক্ষেপ, রিজভীর জীবনের অধ্যায় শুরু হওয়ার আগেই সমাপ্তি ঘটে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে সম্প্রীতির : সেলিমুজ্জামান

লালমনিরহাটে দুর্গাপূজার উদ্বোধন করলেন হাঙ্গেরি দূতাবাসের কনসাল 

চট্টগ্রামে এভারকেয়ার হাসপাতালে বিশ্ব হার্ট দিবস উদযাপন

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার ছুরিকাঘাতে জামায়াত নেতা খুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অচলাবস্থা নিরসনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগ

তারেক রহমান জানেন কীভাবে মানুষের কাছে যেতে হয় : মোস্তফা জামান

স্থানীয় নাগরিক সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকে পুলিশে দিন : শামা ওবায়েদ

প্লাস্টিক কারখানাসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যে ২০ দফা প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প

১০

গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন ট্রাম্প!

১১

নির্বাচনে কেন ‘বিলম্ব’, জানালেন অধ্যাপক ইউনূস

১২

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের ঘন ঘন বাংলাদেশে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

১৩

নেপালের কাছে সিরিজ হারের লজ্জায় ডুবলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৪

গাজা যুদ্ধ বন্ধে রাজি ইসরায়েল

১৫

অসুরকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনে পূজা পরিষদ ও পূজা কমিটির উদ্বেগ

১৬

কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু

১৭

জিআই স্বীকৃতি পেল নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি

১৮

মর্গে পড়ে আছে অজ্ঞাত দুই নারীর লাশ

১৯

জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল মাদাগাস্কার

২০
X