অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে 'বীর নিবাস'। ইতোমধ্যে এ উপজেলায় প্রথম ধাপে তালিকাভুক্ত ১০টি বীর নিবাস নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের এসব বীর নিবাসে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সঠিক তদারকির অভাব ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন এবং সময়মতো কাজ না হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে তাঁতিপাড়া গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফয়জুর রহমানকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে 'বীর নিবাস' নামে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় স্বপ্নের সেই ঘর পেয়ে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা খুশি হয়েছিলেন। এই ঘর তাকে দিয়েছিল নিরাপদ, শান্তি সুখে বসবাসের একটু আশ্রয় ও অনাবিল আনন্দ। দিয়েছিল সম্মান এবং সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু স্বপ্নের সেই ঘর হস্তান্তরের পূর্বেই একাধিক জায়গায় ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে দেয়ালের প্লাস্টার। খসে পড়া প্লাস্টার পড়ে আহত হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নীলফামারীর চার উপজেলায় ৮৮টি। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৭, ডিমলা উপজেলায় ৩৪, সৈয়দপুর উপজেলায় ১১ এবং ডোমার উপজেলায় ২৬টি 'বীর নিবাস' নামে একতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সারা দেশে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহীদ ও প্রয়াত এবং অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী- সন্তানদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। চলমান এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফয়জুর রহমানকে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। ২২ ফুট প্রশস্ত এবং ২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এ ঘরে দুটি বেডরুম, দুটি বাথরুমসহ ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন রুম ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, একটি সু-প্রশস্ত্র বারান্দা ও শৌচাগার। এ ছাড়াও থাকবে হাঁস এবং মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড। ঘরটি নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাতে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এ পরিবারটি।
বাড়িটির চারপাশে ঘুরে দেখা যায়, পূর্ব ও উত্তরের দেয়াল এবং বাড়ির প্রবেশ গেটে লম্বালম্বি ফাটল ধরেছে। বাড়ির বাইরের দেয়ালে প্লাস্টার করেছেন দায়সারাভাবে। ভবনটিতে নেই কোনো আরসিসি ঢালাই। মেঝের ঢালাইয়ে ইটের খোয়া উঠে আসছে। দেয়ালের প্লাস্টার কোনো কোনো জায়গায় খসে পড়ছে। মুক্তিযুদ্ধের লোগো সংবলিত ফলকের রং উঠে লোগো বোঝাই যাচ্ছে না। বীর নিবাসের ফলকে মুজিব লেখা আগেই উঠে গেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান জানান, গত ১ জুন আমার বসতবাড়িতে আগুন লেগে থাকার ঘরসহ সব কাগজপত্রাদি পুড়ে যায়। পরে ইউএনও সাহেবের সঙ্গে কথা বললে তিনি, ঠিকাদারের সাথে কথা বলে নির্মিত বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু এই বাড়িটি চলিত বছরের জুন মাসেই আমাদের কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও ঠিকাদার এবং ইউএনও জানান, মন্ত্রণালয়ের টাকা না আসার কারণে ঠিকাদার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারছেন না।
তিনি আরও জানান, দেয়ালের বিষয়ে ঠিকাদার একাধিকবার জানানো হয়েছে তিনি এসে কাজ করে দিয়ে যাবেন। তিনি এলেনও না, এখন পর্যন্ত কাজ করেও দিলেন না। মেঝের ঢালাই উঠে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের লোগো উঠে গেছে। তারা যদি আমাদের বাড়ি নির্মাণে এত হয়রানি করায় তাহলে অন্য কাজে তারা কী করেন? সেটা আপনারা বুঝেন! ইউএনও মহোদয় বলেছিল ঠিকাদার এসে সব ঠিক করে দিবে কিন্তু দিল না।
ঠিকাদার মোরশেদ হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিল্ডিংয়ের এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। আর এত কম টাকায় কাজ কী আর করব? এরমধ্যে ৩/৪ লাখ টাকার কাজ করবে মন্ত্রণালয়। মেঝেতে যে ঢালাই দেওয়া হয়েছে টাইলস বসালে ঠিক হয়ে যাবে। কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও কম এসেছে, আমাদের এখনো সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেনি। ফাটল ধরলে তো বাড়ি ভেঙে যেত, কিন্তু যাই নাই তো।
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেজবাহুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া এমনটি হওয়ার কথা নয়। আগামীকাল সরজমিনে দেখে ব্যবস্থা নিব।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ভবনে যদি কোনো ফাটল ধরে, তাহলে আমরা সেই ভবন গ্রহণ করব না। আর ভবন হস্তান্তরের কোনো নির্দেশনা নেই, তবে জুন মাসে করলে ভালো হতো। আমি ইঞ্জিনিয়ারকে পরিদর্শনের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছি। কাজে কোনো প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন