চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতি

কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। ছবি : কালবেলা
কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। ছবি : কালবেলা

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বেসরকারি দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যদের জমা রাখা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে সমিতি সংশ্লিষ্টরা। বছরের পর বছর ধরে সমিতির দায়িত্বরতদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নিজের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না জমাকারী প্রায় ২ হাজার সদস্য। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্যরা।

সদস্যদের দাবি, জমা টাকা ফেরত চাইলে সংশ্লিষ্টরা হুমকিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। তবে আ.লীগ সরকার পতনের পর পরই এসব টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সবাই।

এসব অভিযোগ উঠেছে উপজেলা রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ এলাকায় দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি উপজেলা আ.লীগের নেতাদের সহযোগিতায় ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওই বছরেই উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন পায় সমিতিটি। চক্রটি প্রায় ২ হাজার সদস্য নিয়ে লোক দেখানো ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম শুরু করে। সমিতিতে ১ লাখ টাকায় প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা লভ্যাংশ প্রদানের শর্তে বিভিন্ন মেয়াদে অন্তত ২ শতাধিক সদস্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা জমা রাখেন। এ ছাড়া এসব সদস্য প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকাও জমা দিতেন। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্রটি।

জানা গেছে, সমিতির পক্ষ থেকে ব্যাংকের তুলনায় লভ্যাংশ বেশি দেওয়ার আশ্বাস ও যে কোনো সময় জমাকৃত টাকা উত্তোলণের সুযোগ রাখায় খুব সহজেই ফাঁদে পড়েন সাধারণ মানুষ। নিজের জমি বিক্রি, অবসর ভাতার প্রাপ্ত টাকাসহ কষ্টে উপার্জিত সমস্ত টাকা জমা রাখেন ভুক্তভোগী সদস্যরা। পাশাপাশি সদস্যরা সঞ্চয়ও জমা দিতেন প্রতিমাসে।

প্রথম দিকে সমিতির কার্যক্রম ঠিকঠাক থাকলেও বিগত বছরে সমিতি সংশ্লিষ্টদের টাকা আত্মসাতের গুঞ্জন শোনা যায়। পরবর্তীতে জমাকারী সদস্যরা টাকা তুলতে গেলে চলতি বছরের প্রথম থেকেই সমিতির পক্ষ থেকে তালবাহানা শুরু হয়। জানা যায়, এমন ঘটনার পর কিছু কিছু সদস্যরা তাদের টাকা ফেরত নিতে বেশি চাপ প্রয়োগ বা আইনি সহায়তা নিতে গেলে সদস্যদের সামান্য টাকা দিয়ে পরিবেশ ঠিক রাখার চেষ্টা করতেন।

টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর আলম বলেন, সমিতির সব ধরনের লেনদেনসহ যাবতীয় কাজ করতেন পরিচালক আনিছুর রহমান আনিছ। এই আনিছসহ সে সময় আওয়ামী লীগের থানাহাট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন, স্থানীয় আ.লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদ আনোয়ার পলাশসহ আরও বেশ কয়েকজন জড়িত হয়ে সমিতির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি নিজেই বাদী হয়ে আনিছের নামে টাকা আত্মসাতের মামলা দিয়েছিলাম। পরে সেই মামলার তদন্তও টাকা দিয়ে গোপন রাখেন। আমি বিএনপি করি জন্য বিগত সময় এসব নিয়ে কথা বললে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে হুমকি দিত। কয়েক মাস থেকে আমি সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে নেই আর।

তবে টাকা আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে থানাহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন বলেন, আমি কোনোদিন তাদের ওখানে যাইনি, জানিও না। এ বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

সরেজমিনে সমিতির অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসটিতে সাইনবোর্ড থাকলেও গত মাস থেকে ভেতরে একটি নূরানি মাদ্রাসার কার্যক্রম চলছে।

জামাল উদ্দিন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক বিজিবি সদস্য বলেন, আমি বিজিবিতে ৩৭ বছর চাকরি করেছি। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমার পেনশনের ৪ লাখ টাকা সমিতিতে রাখি। তারা প্রতি লাখে ১ হাজার টাকা লাভ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা এমনও বলে, যখন ইচ্ছা তখন লভ্যাংশসহ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এক বছর থেকে লভ্যাংশ তো নেই, জমা টাকা পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিলকিস বেগম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার একটা জমি বিক্রি করার পর সমিতির লোকজন বাসায় আসে এবং আমাকে বলে ওখানে টাকা রাখলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। তাই আমি আমার দুই মেয়ের নামে সাড়ে তিন লাখ টাকা জমা রাখি। এ ছাড়াও দুই মেয়ের নামে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে সঞ্চয় রাখছিলেন। কিন্তু বছর খানেক ধরে টাকা চাইতে গেলে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা নানাবিধ কারণ দেখিয়ে তালবাহানা করছেন।

শাহিনুর আক্তার বলেন, আমি চাকরি শেষে ২০১৯ সাল থেকে সমিতিতে টাকা রাখা শুরু করি। ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এ ছাড়াও ৪৩ হাজার টাকা সঞ্চয় রাখি। তবে এখন এই টাকার জন্য সমিতির কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। সভাপতির কাছে টাকা চাইতে গেলে তিনি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন, সাধারণ সম্পাদকের কাছে গেলে তিনি ক্যাশিয়ারের কাছে চাইতে বলেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয় না। আমি আমার জমা টাকা ফেরত চাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিতির পরিচালক আনিসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা সমবায় অফিসার কে এম মাসুদুর রহমান জানান, সমবায় বিধি মোতাবেক হিসাব নিকাশ জমা না দেওয়ায় গত বছর ওই সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কমিক বইয়ে ‘ভয়ংকর পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী’, জাপানজুড়ে আতঙ্ক

দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই: আব্দুস সালাম

ইসরায়েলের পাঁচ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান

‘আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ভোটের বাক্স হবে একটাই’

লঙ্কানদের বিপক্ষে ফাইফারের পর যা বললেন তানভীর

হবিগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই নেতা আটক

আঘাত, লাল কার্ড, বিদায়—সব পেছনে ফেলে সেমিতে পিএসজি

৬ জুলাই / বিক্ষোভে উত্তাল দেশ, ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা

নারী দলের জন্য গভীর রাতে অভিনব সংবর্ধনার আয়োজন

পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম

১০

ক্যান্সার আক্রান্ত জিসানের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন তারেক রহমান

১১

সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক ‘সোনালী ঈগল’, অর্থ কী ও কেন?

১২

‘বিআইটি মডেল’ বাস্তবায়ন দাবিতে উত্তাল ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

১৩

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক উৎসবমুখর নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বিএনপি : প্রিন্স

১৪

তপশিল ঘোষণার পর জোট বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে : ফারুক

১৫

কুমিল্লায় ৩ খুনের নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার

১৬

চালের দাম নিয়ে সুখবর দিলেন খাদ্য উপদেষ্টা

১৭

আন্তর্জাতিক ইসলামি সংগঠনের প্রতিনিধির সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সভা

১৮

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন : ধর্ম উপদেষ্টা

১৯

বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি না করার আহ্বান সাকির

২০
X