চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে ঝিনাইদহের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার ব্যবস্থা। রোগীরা জানান, চিকিৎসক সংকট ও যন্ত্রপাতির অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না তারা।
এদিকে চিকিৎসকরা জানান, ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদে লোক জনবল নিয়োগ দিলেই সেবার মান বাড়বে।
সূত্র মতে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট থাকার কথা ছিল ৩৬ জন। কিন্তু তার মধ্যে ২১ জন মেডিকেল অফিসার সেবা দিচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ১১জনসহ ১৫ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে শূন্য। এ ছাড়া ওয়ার্ডবয়, আয়া-ঝাড়ুদারসহ অনান্য পদে শূন্য রয়েছে ৬২ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছে- মেডিসিন, শিশু, গাইনি, সার্জারি, হাড় জোড়া রোগ, চর্ম ও যৌন রোগ ও অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ।
এ ছাড়া এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নষ্ট রয়েছে। যার কারণে চিকিৎসা নিতে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।
জানা গেছে, এ উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের একমাত্র এ হাসপাতালে প্রতিদিনি বহিঃবিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগীর চাপসহ ভর্তিরত রোগী ১০০ থেকে ১৫০ রোগী সেবা নিচ্ছে। একদিকে বেড না পেয়ে রোগীরা মেঝেতে সেবা নিচ্ছে, অপরদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে পাচ্ছে না কোনো উন্নত সেবা। তবে জনবল ও চিকিৎসক নিয়োগ হলেই বাড়বে সেবার মান ।
ভুক্তভোগী হাসান আলী, রওশানারা ও রিনা খাতুন জানান, হাসপাতালের আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি ও এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নষ্ট হওয়ার কারণে তাদের বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা লাগছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। আমরা গরিব মানুষ তারপরও আমাদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বাইরে যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যাওয়া হয় তখন অতিরিক্ত মূল্য দিয়েই বাধ্য করতে হচ্ছে। রোগী কায়সার. ডলি খাতুন ও স্বজন রাকিব হাসান ও মতিন মোল্লা অভিযোগ করে জানান, উপজেলার একমাত্র এই হাসপাতালে তারা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না। হাসপাতালে নোংরা। একদিকে আরেক দিকে ভর্তি রোগীর চাপ বেশি আর বেড না থাকায় মেঝেতে শুয়ে সেবা নিতে হচ্ছে তার। অপরদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে তারা উন্নত চিকিৎসা তেমন পাওয়া যায় না। আর আধুনিক মানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আরিফুর রহমান জানান, রোগীদের এত চাপে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দিলে সেবার মান অনেক বাড়বে।
সেবিকারা জানান, ৫০ বেডের পরিবর্তে রোগী অনেক বেশি থাকে। আয়া, সুইপার, ঝাড়ুদার সংকটের কারণে তাদের নানা সমস্যার ভেতরেই সেবা দিতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি আনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হবে। আমরা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
অপরদিকে সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রার রানী দেবনাথ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রোগীদের চাপের কারণে মেঝেতে সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছে এই বিষয়ে শুনেছি। চিকিৎসকসহ অনান্য সংকটে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। নিশ্চয় সমস্যার সমাধান হবে। মানুষের সেবার মান বাড়বে ও জনভোগান্তি কম হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন জানান, এ উপজেলাতে জনসংখ্যা প্রায় চার লাখের অধিক। ৫০ বেডের হাসপাতালে রোগীদের চাপ তিনগুণ। যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বল্প লোক জনবল দিয়ে সেবা দিয়ে চলতে হচ্ছে। যেসব চিকিৎসক রয়েছেন তাদের দিয়েই অপারেশন, জরুরি বিভাগে ডিউটি ও বহিঃবিভাগে রোগী দেখতে হচ্ছে। লোক জনবল পেলে এই ধরনের অভিযোগ আর থাকবে না।
মন্তব্য করুন