কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর খাদিজা আক্তার (১৪) নামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় খাদিজার এ করুণ পরিণতি হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নের বড়ধুশিয়ায় ওই ঘটনা ঘটে। খাদিজা স্থানীয় বড়ধুশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে একই এলাকার ইসমাইল হোসেনের মেয়ে।
খাদিজার স্বজনরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে জানান, প্রতিদিনের মতো খাদিজা বিদ্যালয়ে যায়। দুপুরে টিফিনের বিরতির সময় সে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারায়।
তার সহপাঠীরা তাকে বিদ্যালয়ের বেঞ্চে শুইয়ে দেয়। এ সময় কোনো শিক্ষক এগিয়ে আসেননি।
পরে সহপাঠীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাবা ইসমাইল হোসেন গিয়ে খাদিজাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে পাঠান। পথে সে মারা যায়।
এ ব্যপারে সহপাঠী ও চাচাতো বোন জামিলা খাতুন জানায়, টিফিনের সময় প্রতিদিন তারা এক সঙ্গে বাড়িতে আসত। ঘটনার দিনও খাদিজাকে বাড়ি যেতে বললে সে শরীর ভালো লাগছে না বলে জামিলাকে একা চলে যেতে বলে। জামিলা বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে ফিরে শুনতে পায় খাদিজা অজ্ঞান হয়ে শ্রেণিকক্ষে পড়ে আছে। এ সময় সে বাড়িতে খবর দিলে খাদিজার মা-বাবা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
চাচা মো. মোস্তফা জামান বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের বিচার চাই। শিক্ষকদের অবহেলায় আমার ভাতিজি মারা গেছে। শিক্ষকরা সময় মতো আমাদের খবর দেননি। তারা আমার অজ্ঞান ভাতিজিকে দেখতেও যাননি। খাদিজার বন্ধুরা তাকে বেঞ্চে শুইয়ে রাখে। আমার ভাই খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’
এ ব্যপারে বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদের অবহেলায় খাদিজা মারা গেছে। সে অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি তারা আমাদের খবর দিতেন, তাহলে আমার মেয়েকে চিকিৎসা করানো যেত। আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে অথচ তাকে কোনো শিক্ষক দেখতেও যাননি, আমাদের খবরও দেননি। চিকিৎসক বলেছেন, মেয়েকে অনেক দেরি করে নিয়ে গেছি। আমি এ অমানবিক শিক্ষকদের বিচার চাই।’ এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বড়ধুশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি বিদ্যালয় থেকে দুপুর ১টায় বের হয়ে উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। খাদিজা কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিল। ঘটনার দিন বিদ্যালয়ে সে বমি করার পর অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে আমাদের শিক্ষকরা তার অভিভাবকদের খবর দিলে তারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা জাহান বলেন, ‘রোগীকে আমাদের কাছে অনেক দেরি করে আনা হয়েছে। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বেশ অবনতির দিকে ছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই।’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
মন্তব্য করুন