পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কালবেলার খবরে সাহায্য মিললেও চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু সাহাদুলের

সাহাদুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা 
সাহাদুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা 

অর্থাভাবে মাত্র ৮০-৯০ টাকার হোমিওপ্যাথিতে ভরসা করে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গেছেন রংপুরের পীরগাছার দশগাঁও গ্রামের সাহাদুল ইসলাম (৫৫)। দুই সপ্তাহ আগে কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রবাসীসহ অনেকেই তার পাশে দাঁড়ালেও উন্নত চিকিৎসা শুরুর আগেই থেমে গেল তার জীবনযুদ্ধ।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।

সাহাদুল ইসলাম প্রায় চার বছর ধরে ঠোঁটের জ্বরঠোসা থেকে মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারে ভুগছিলেন। চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও অর্থাভাবে তা হয়নি। বাধ্য হয়েই মাত্র ৮০-৯০ টাকার হোমিওপ্যাথি ওষুধেই নির্ভর করছিলেন। ফলে মৃত্যুর আগে তার মুখের প্রায় ৩০ শতাংশ অংশ পচে যায়। এজন্য সবসময় তার মুখমণ্ডল মাস্ক ও গামছা দিয়ে ঢেকে রাখতেন সাহাদুল।

দুই সপ্তাহ আগে কালবেলায় ‘অর্থের অভাবে হোমিওতে চলছে ক্যান্সার আক্রান্ত সাহাদুলের চিকিৎসা’ সাহাদুলের দুর্দশার খবর প্রকাশিত হলে আমেরিকা প্রবাসী পীরগাছার বড়পানসিয়া গ্রামের ফয়েজ আহমেদ তার ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পাঠান। পীরগাছার ইউএনও মো. নাজমুল হক সুমনও আর্থিক সহায়তার চেক দেওয়ার কথা কালবেলার প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন।

সেই সহায়তার টাকা দিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সাহাদুলকে রংপুরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করার পরিকল্পনা ছিল তার স্ত্রীর। কিন্তু সোমবার দুপুরে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সাহাদুল ইসলাম। এদিন রাত ৯টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা জানান, যদি অনেক আগে সহায়তা মিলত, তাহলে হয়ত সাহাদুল বেঁচে থাকতেন।

সাহাদুল অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী লাভলী বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে, দিনমজুরি করেই সংসার চালাচ্ছেন। ছোট মেয়ে পড়ে নবম শ্রেণিতে। বড় মেয়েকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন।

আগের প্রতিবেদন তৈরির সময় কালবেলার প্রতিবেদককে যে কথা বলেছিলেন সাহাদুল, তার মৃত্যুতে এখনো যেন কানে বাজে সেই কথা, ‘আমি বাঁচতে চাই, ছোট মেয়েটার বিয়ে দিতে চাই’।

তার মেয়ে সামিয়া আক্তার সেতুর কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালবেলাকে দেওয়া সেই আগের সাক্ষাৎকার আজও যেন বাজে— ‘সবাই সবার বাবার সঙ্গে ঘোরে, আমি পারি না। কেননা, আমার বাবার মাস্ক খুললেই সবাই ভয় পায়। আমি চাই আমার বাবা বেঁচে থাকুক।’

হতদরিদ্র সাহাদুলের এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়— সময়মতো সহায়তা ও চিকিৎসা পাওয়ার গুরুত্ব কতটা বেশি। সাহাদুলের মতো আর কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় এই প্রত্যাশা সাহাদুলের প্রতিবেশীদের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজশাহীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত একজনের মৃত্যু

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

জনগণ সরকারের কাছে আইনের শাসন প্রত্যাশা করে : রিজভী 

স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে দুর্গম চৌহালী উপজেলাকে অন্তর্ভুক্তির দাবি

এত নোংরামি করার পরও ভদ্রতার লাইন ক্রস করিনি: আসিফ

সাবেক এমপি বেনজিরের ফ্ল্যাট-প্লটসহ জমি জব্দ

১২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন মিষ্টি 

মবের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা : ফারুক

সরকার পরিকল্পিতভাবেই মব সৃষ্টি করছে : রাশেদ

ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, ইরানে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

১০

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধ করতে হবে : মির্জা ফখরুল 

১১

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ অনুষ্ঠিত

১২

শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স আমিনুলকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল

১৩

ইসরায়েলের হয়ে কাজ করা ৭০০ ভাড়াটে সৈনিক গ্রেপ্তার

১৪

বৈষম্যবিরোধী ছেড়ে ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দিলেন ৩ নেতা

১৫

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে বাংলাদেশকে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয় : তারেক রহমান

১৬

এক ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না : বিএনপি

১৭

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করল ইরান

১৮

সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার

১৯

রাইস কুকারে রান্নার সময় কোলের শিশুসহ মায়ের মৃত্যু

২০
X