তীব্র রোদে তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল। তাপমাত্রার পারদ গিয়ে ঠেকেছে চল্লিশের ঘরে। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় সবকিছুই যেন ওষ্ঠাগত। আর এই খরার কারণেই গাছেই শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এনিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের।
সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির দেখা না মেলায় খরার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গাছে আমের গুটি শুকিয়ে ঝরার ফলে ফিকে হতে শুরু করেছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন।
এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষি অফিস বলছে, পানি সেচ ও পানি স্প্রে করতে হবে গাছে। তবে বৃষ্টির পানি ছাড়া আমের গুটি ঝরা বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছে ফল গবেষণা কেন্দ্র। তারা বলছে, তাপদাহের কারণে আমের বোঁটার আঠা শুকিয়ে যাচ্ছে। বোঁটায় রস না থাকায় আম ঝরছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস মতে, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। আর চলতি সপ্তার হিসেবে সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল ২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সরেজমিনে রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া, মেহেরচন্ডি, পবার হরিয়ান, শ্যামপুর, পারিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আম ঝরে পড়ার চিত্র দেখা গেছে। চাষিরা বলছেন, এ বছর ৯০ শতাংশ মুকুল এসেছিল। মুকুলগুলো ঝরে গিয়ে আবার নতুন করে পাতা বের হয়েছে। ফলে আমের গুটি টিকেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এই আম টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত না হলে আগামী সপ্তাহে তীব্র তাপদাহ বইবে। ফলে আরও আমের গুটি ঝরবে। এর মধ্যে রয়েছে কালবৈশাখী ঝড়।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক এসএম গাউসুজ্জামান বলেন, গেল কয়েক দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গতিবিধিতে দেখা গেছে, রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত বৃহস্পতি ও বুধবার (২৪ ও ২৩ এপ্রিল) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২২ এপ্রিল সর্বোচ্চ ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২১ এপ্রিল সর্বোচ্চ ছিল ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং ২০ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পবার আমচাষি শামসুজ্জমান বলেন, প্রতি বছর কালবৈশাখী ঝড় হবে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ের আগে খরা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আমের জন্য। কারণ খরার কারণে আমের বোঁটা শুকিয়ে থাকে। হালকা বাতাস হলেই ঝরে পড়ে। আর ঝড় হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। তবে ঝড়ের কয়েক দিন আগে বৃষ্টিপাত হলে ততটা ক্ষতি হয় না।
পবার পারিলা গ্রামে ২ বিঘা আমের বাগান লিজ নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। বাগানের ৫৫টি গাছ তিন বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন তিনি। আম ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গাছে মুকুল এসেছিল মোটামুটি। মুকুল থেকে গুটি হয়েছিল ভালোই। কিন্তু খরার কারণে ঝরে যাচ্ছে গুটি। গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় আমের গাছ স্প্রে করা সম্ভব না। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
তিনি বলেন, মূলত আমার আমের ব্যবসায় সংসার চলে। মৌসুমে আমের ব্যবসা করি; আর সারা বছর চলি। আমের মুকুল ও গুটি দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলাম-কিছু ঋণ পরিশোধ করব বলে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না শেষ পর্যন্ত কী হবে। বাগানে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। কোনোভাবে রক্ষা হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত হলে গুটি ঝরা রোধ হবে। এ নিয়ে মনের ভেতরে লোকসানের শঙ্কা কাজ করছে।
আমচাষি মনি মিঞা বলেন, কয়েকদিন থেকে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছি। ছোট গাছগুলোতে পানি স্প্রে করছি। একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিক নিয়ে দেখা যাচ্ছে খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর বড় বড় গাছগুলোতে পানি স্প্রে করা সম্ভব না। সেগুলো ট্যাপ লাইনের মাধ্যমে পানি দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপদাহে আমের ক্ষতি হবে, গুটি ঝরবে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি থমকে যাবে। বৃষ্টিপাত হলে আমের গুটি ঝরা কমে যাবে। আমের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে আমের গুটি ঝরা রোধে গাছের গোড়ায় সেচ ও গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।
মন্তব্য করুন