‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে—এই বাংলায় হয়ত মানুষ নয়—হয়ত বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে’ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় অতি পরিচিত পাখি শালিক। এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, বাড়ির আঙিনায়, গাছে গাছে শালিকের ঝাঁক দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে সারা বাংলাদেশের মতো সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা সেই শালিক পাখি।
ছোট আকৃতির ধূসর রঙের এই পাখিগুলো অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের হয়। পাখিদের মধ্যে শালিক পাখি জনবসতির আশপাশে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। এমন একসময় ছিল যখন সকাল-সন্ধ্যায় শালিকের ঝাঁক তাদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত করে তুলতো পল্লি গাঁয়ের বাঁশ বাগান। মনে হতো যেন, বাঁশ বাগান জুড়ে বসেছে শালিকের হাট। ভোরে শালিক পাখির কিচির-মিচির শব্দে ভাঙতো পল্লি গাঁয়ের মানুষের ভোরের ঘুম। পাখির কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন দিন দিন পাখিশূন্য হতে চলছে। পাল্টে যাচ্ছে বনে জঙ্গলে গাছে গাছে পাখি দেখার অপরূপ দৃশ্যপট।
সরেজমিনে জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানান, এক সময় ধান, গম ও সরষে ক্ষেত ছাড়াও বাড়ির আঙিনায়, বাঁশ ঝাড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক পাখি দেখতে পেতাম। এখন তা আর চোখে পড়ে না।
কৃষক চান মিয়া বলেন, আমি এক সময় শালিক পাখি পালতাম, এখন পাই না শালিক পাখি। পাখি পোকামাকড় খেয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদনে আমাদের সহায়তা করে বলে আমরা এদের উপকারী পাখি বলি। আগে ক্ষেতে-খামারে অসংখ্য শালিক পাখি দেখা যেতো। কিন্তু ফসলি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগসহ বিভিন্ন বিষ প্রয়োগে বাঙালির অতি পরিচিত এই পাখি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। মূলত শালিক পাখি আমাদের ফসলের কোন ক্ষতি করে না বরং এরা কৃষি জমির ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে আমাদের ক্ষেতের ফসল রক্ষা করে।
কৃষক রহিম, জব্বার, করিম বিজনসহ অনেকে বলেন, ধান, গম, সরিষাসহ বর্তমানে সব ধরনের ফসলে বিষ বা কীটনাশক না দিলে ফসল করাই সম্ভব নয়। কারণ বিষ প্রয়োগ না করলে বিভিন্ন রোগ বালাই, পোকামাকড়ে ফসল নষ্ট করে দিবে। তাই ফসল রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে আমাদের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
পাখি সকিনদার আব্দুর রহিম বলেন, কালের বিবর্তনে ও যান্ত্রিক সভ্যতার প্রসারে অবাধে বৃক্ষনিধন এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে শালিকসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর সুন্দর পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। একসময়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষ আখ, ধান, গম ও সরষে ক্ষেতে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক পাখি দেখতে পেতো। তখন গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির কলরবে, কিন্তু এখন তা আর চোখে পড়ে না। শালিক পাখিসহ অন্যান্য দেশীয় পাখি রক্ষায় প্রশাসনসহ সকল মানুষকে পাখি শিকারিদের হাত থেকে এবং পাখির ক্ষতি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি তাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কালের পরিবর্তনে শালিক পাখি দেখা যায় না, আগে প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ বলেন, আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুন্দর পাখিগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। এদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এ জন্য পরিবেশবিদদের পাশাপাশি সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্তব্য করুন