গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়াকে কেন্দ্র করে নাসির উদ্দিন নামের এক শিক্ষককে গণধোলাই দিয়েছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। এ সময় অভিযুক্তসহ শিক্ষকের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য অভিযুক্ত একই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) সকালে উপজেলার মান্দ্রা-রাধাগঞ্জ ইউনাইটেড ইনস্টিটিউশনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিনের ভাই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল।
সম্প্রতি ওই কুপ্রস্তাবের কয়েকটি অডিও শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
মঙ্গলবার প্রতিদিনের মতো স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। অ্যাসেম্বলি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে রাধাগঞ্জ-কুশলা সড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন বিদ্যালয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর রোষাণলে পড়ে তিনি গণধোলাইয়ের শিকার হন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
মান্দ্রা-রাধাগঞ্জ ইউনাইটেড ইনস্টিটিউশনে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশা লতা হাজরা, তিনা বাড়ৈ, পিঙ্কি বিশ্বাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ভাই সাইফুদ্দিন কাজল দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিভিন্ন জনকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। আমার প্রধান শিক্ষককে এ ঘটনা জানালে তিনি কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেননি। তাই আমরা ক্লাস বর্জন করে ওই শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ করেছি। যতদিন পর্যন্ত শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের শাস্তি না হবে আমরা ততদিন পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘একজন শিক্ষক হয়ে মেয়ের বয়সী ছাত্রীকে সে কীভাবে কুপ্রস্তাব দেয়? সাইফুদ্দিন কাজল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মেয়েকে কুস্তাব দিচ্ছে। আমরা বেশ কয়েকেবার প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানালেও তিনি তার ভাইয়ের বিচার করেননি।’
মান্দ্রা-রাধাগঞ্জ ইউনাইটেড ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষক হাসান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়া এলাকায় না থাকায় তাকে বরখাস্ত করতে পারিনি। এডহক কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়া এলাকায় আসলে সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলাকার পরিস্তিতি এখন শান্ত। শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা সিদ্দিক নুর আলম বলেন, ছাত্রীকে কুপ্রস্তাবের ঘটনায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার এস এম শাহজাহান সিরাজকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন