আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ডাক্তার ও জনবল সংকটে সেবাবঞ্চিত ৬ লক্ষাধিক মানুষ

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,কুমিল্লা। ছবি : কালবেলা
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,কুমিল্লা। ছবি : কালবেলা

নানামুখী সংকটে অসুস্থ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানে অবস্থিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। রয়েছে ডাক্তার ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট।

মূল ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল, বিভিন্ন জায়গায় ঝরে পড়েছে পলেস্তারা। নিরাপত্তা, দূষিত পরিবেশ ও দালালদের উৎপাতে ব্যাহত স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা। উপজেলার ছয় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে নিজেই সংকটাপন্ন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪৩ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়মিত দুর্ঘটনার রোগী আসা গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নেই জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ও অর্থপেডিকস।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম সংকটগুলো হলো জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও আবাসন সংকট। জনবল সংকটে সৃষ্টি হয়েছে আরও অনেক সংকট। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাঁচটি পদের বিপরীতে আছেন একজন।

ফলে অপরিচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই রোগী দেখতে হয় ডাক্তারদের। ওয়ার্ড বয়ের তিনটি পদের মধ্যে আছেন একজন, আয়ার পদ শূন্য একটি, দুই বাবুর্চির মধ্যে আছেন একজন, তিন অফিস সহকারীর মধ্যে নেই দুজন। নেই জুনিয়র টেকনেশিয়ান, স্টোর কিপার ও ক্যাশিয়ার। দুটি ফার্মাসিস্ট পদের মধ্যে শূন্য একটি।

২৪ ডাক্তার ও ১১ কনসালট্যান্টের মধ্যে নেই জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি, নাক কান গলা, অর্থপেডিকস ও চক্ষু। বেতন এখান থেকে নিলেও অর্থপেডিকস ও ফিজিক্যাল মেডিসিন ডাক্তার সংযুক্তিতে রয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নার্সের ৩০টি পদ থাকলেও বর্তমানে নেই ৯ জন। মাঠপর্যায়ে ৮৪টি স্বাস্থ্য সহকারী পদের মধ্যে নেই ১৪ জন।

বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার রোগী সেবা নেওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে নেই টিকিট অটোমেশন। এতে রোগীদের লেগে যায় লম্বা লাইন, বাড়ে ভোগান্তি। টিকিট ক্লার্কে নেই কোনো জনবল। নিরাপত্তাকর্মীর তিনটি পদের মধ্যে দুটি পদই শূন্য। যার ফলে সন্ধ্যা হলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ভিড় জমায় মাদকসেবীরা।

হাসপাতাল সূত্র আরও জানা যায়, প্রতি মাসে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনার রোগী আসে ১৫০-২০০ জন। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে থাকেন ৭০-৮০ জন। দোতলায় পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডের নেই বারান্দা, অতিরিক্ত রোগী বাধ্য হয়ে রাখতে হয় চলাচলের পথে। প্রতি মাসে মারামারির রোগী আসে ৭৫০-৮০০ জন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন মাসে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার জন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়ক থেকে ৭ ফুট নিচু জায়গায় অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। গত বছরের বন্যায় প্রায় ডুবে যায় ভবনের নিচতলা। এতে নষ্ট হয়ে যায় ডেন্টাল মেশিন, টিকিট অটোমেশনসহ ৭-৮ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। ভেঙে পড়েছে দরজা, জানালা। বন্যায় নষ্ট হওয়া এক্সরে মেশিন বহু চেষ্টায়ও মেলেনি এখন পর্যন্ত।

হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ফিট আছে, কিন্তু সেটিও অচল। হাসপাতালের পেছনেই গর্ত করে ফেলা হয় আবর্জনা। ফাটা সুয়ারেজ লাইনে দূষিত পরিবেশ, মশার উৎপাতে স্থির থাকা দায়। কখনো কখনো পৌর কর্তৃপক্ষ মশক দমন কার্যক্রম পরিচালিত হলেও এই সেবা থেকে বঞ্চিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

দোতলায় কিছু কিছু জায়গায় ঝরে পড়ছে পলেস্তাো। নীচতলায় ইপিআই রুমের পূর্ব পাশের দেয়াল (সমাজসেবা রুম) ধসে পড়ছে, ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়ালে। বহির্বিভাগে নেই ডাক্তার বসার পরিবেশ। নেই কনসালট্যান্ট বসার জায়গা। একই রুমে পার্টিশন করে রোগী দেখেন দুই ডাক্তার।

স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতিবন্ধকতার জন্য আবাসন সংকটকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবাসন সংকটের কারণে ডাক্তার ও নার্সরা থাকেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে ভাড়া বাসায়। এ কারণে জরুরি ও অন্য অসুস্থতায় তাৎক্ষণিক মেলে না সেবা। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা কোয়ার্টারে ডাক্তার না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষায় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ছয়টি আবাসিক ভবনের মধ্যে পরিত্যক্ত তিনটি ভবন। ডাক্তাররা প্রায় সবাই থাকেন বাইরে।

আবাসনে সব মিলিয়ে প্রয়োজন ৬০ ইউনিট। নার্সদের কোয়ার্টারে থাকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও কিন্তু কেউ এখানে থাকতে পারছেন না। দুজন বসবাস করছেন অনুপযোগী ভবনে ঝুঁকি নিয়ে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রশিদ আহমেদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, জনসংখ্যা বিবেচনায় এখানে প্রয়োজন ১০০ শয্যার হাসপাতাল। গত বছরের বন্যায় এক্সরে মেশিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটি। রয়েছে ডাক্তার ও জনবল সংকট। স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে দ্রুত প্রয়োজন সম্প্রসারিত ভবন ও চিকিৎসকদের নতুন আবাসিক ভবন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. জামাল হোসেন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অটোমেশন প্রতিস্থাপনে এরই মধ্যে আমরা পৌরসভা থেকে আর্থিক বরাদ্দ দিয়েছি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কিডনি রোগ ও প্রবীণদের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

শিরোপার আরও কাছে মোহামেডান

চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল-কৃষক দলের ৩ নেতাকে বেধড়ক পিটুনি

দেশকে এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন : সালাহউদ্দিন

কখনোই উদ্যোম ও সাহস হারানো যাবে না : বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার

ধানমন্ডিতে ফের জুমার নামাজ আদায় করলেন ডা. জুবাইদা

শেষবারের মতো সতর্ক, ক্ষমা চাইলেন শামীম

বিচারপতি আবদুর রউফ স্মরণে জীবনালেখ্য ও দোয়া

কুড়িগ্রামে বিএনপির ৪ নেতার পদত্যাগ

৪০ রোহিঙ্গাকে সমুদ্রে ফেলে দিল ভারত : এপির প্রতিবেদন

১০

রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অংশীদারিত্ব দাবি যুব ঐক্য পরিষদের

১১

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন চায় জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

১২

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে : প্রেস সচিব

১৩

আ.লীগের এখনো শান্তিতে বসবাস আসিফ নজরুলের ব্যর্থতা : হাসনাত

১৪

‘ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’

১৫

২৩ সেকেন্ডে ২১ বার শিশুকে মারলেন শিক্ষক

১৬

‘দাবি মেনে নিয়েছে সরকার, আমরা ঘরে ফিরে যাব’

১৭

তিন বিভাগে ভারী বর্ষণের আভাস

১৮

সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাসেম, সম্পাদক আসাদুজ্জামান

১৯

মধ্যপ্রাচ্যকে অঙ্গীকার / যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো দেশের রাষ্ট্রগঠনে নাক গলাবে না : ট্রাম্প

২০
X