সাংবাদিকদের মর্যাদা নিশ্চিত না করা গেলে গণমাধ্যমকে কার্যত রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে পরিণত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম। তিনি বলেছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দরকার। এসব বিবেচনা করেই সাংবাদিকদের সুরক্ষায় একটি আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে।
রোববার (১৮ মে) দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউস মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে অপ-সাংবাদিকতা প্রতিরোধ এবং বস্তুনিষ্ঠ পরিবেশ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়েদুল্লাহর সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বরিশাল আঞ্চলিক তথ্য কার্যালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মোসা. আফরোজা নাইস। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী ৪০ সাংবাদিকের হাতে সনদ তুলে দেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম।
এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সাংবাদিকতার পেশাকে অবশ্যই দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। গণমাধ্যমকে অবশ্যই নিজস্ব মতামত প্রচার-প্রকাশকে বর্জন করতে হবে। এটা থাকলে গণমাধ্যম গ্রহণযোগ্যতা পায় না। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতাকে প্রতিষ্ঠিত করে, মানুষের মনে আস্থা তৈরি করে। এর মধ্য দিয়ে একটি দেশের গণমাধ্যম মানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়।
বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম বলেন, তথ্য প্রচার-প্রকাশে অসাবধানতায় বা অন্য যে কোনো কারণেই ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। কিন্তু এ জন্য ভুল সংশোধন, দুঃখ প্রকাশ করার সংস্কৃতি আমাদের গণমাধ্যমগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। এতে গণমাধ্যম আরও শক্তিশালী হয়, গ্রহণযোগ্য হয় এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সন্তুষ্ট হয়। এটাই গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা।
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরও বলেন, কেবল অভিযুক্ত হলেই কেউ অপরাধী হয়ে যান না। বিচারে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা যায় না। সাংবাদিকদের অবশ্যই অভিযুক্ত ও অপরাধীর মধ্যে পার্থক্য বোঝা উচিত। মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করতে হবে এবং আইন-আদালতের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে। মানহানিকর বিষয় প্রচারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে, তা না হলে সমাজে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, কোনো সাংবাদিককে সংবাদের সূত্র প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না- এটাই একজন সাংবাদিকের অন্যতম সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা। তবে, তথ্য যেন নির্ভরযোগ্য, সময়োপযোগী ও বস্তুনিষ্ঠ হয়- এটা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশের সাংবাদিক সমাজে বিভাজন রয়েছে উল্লেখ করে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেন, দেশের যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই একাধিক প্রেস ক্লাব দেখছি। সম্প্রতি সিলেটে গিয়ে জানতে পারি, সেখানে আটটি প্রেসক্লাব রয়েছে। মৌলভীবাজারে সাতটি প্রেস ক্লাবের তথ্য পেয়েছি। অথচ প্রেস ক্লাব হলো একটি সামাজিক সংগঠন, যেখানে সাংবাদিকরা মিলিত হবেন, মতবিনিময় করবেন, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্য গড়ে তুলবেন। কিন্তু অতিরিক্ত বিভাজন পেশাদারিত্বকে আঘাত করে। সাংবাদিকদের উচিত পেশার প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং নিজ দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করা।
মন্তব্য করুন