বরিশালের বাবুগঞ্জে সন্ধ্যা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে ৮টি বসতঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শুক্রবার (১৬ মে) সন্ধ্যার দিকে এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
এ দিকে ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে মোল্লারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরও শতাধিক বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকা। গত কয়েকদিনে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন বেড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া, মোল্লার হাটসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করে আড়িয়াল খাঁ নদের মোহনায় কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের মোল্লারহাট এলাকার বেশ কিছু অংশজুড়ে দেবে যায়। ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে ৮টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে মোল্লারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি।
ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন আকন, মৃত কাদেম আকন, আলি চৌকিদার, মৃত হামেদ মাঝি, রাসেল মাঝি, হাচেন মাঝি, সাইফুল ঘরামি, আদম আলিসহ প্রত্যেকের বসতঘর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙনে দেবে যাওয়ার আশঙ্কায় ঘর সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। ঘরবাড়ি হারিয়ে বাসিন্দারা তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
ভাঙনে হুমকিতে থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা জানান, গত ২/৩ বছর আগে মোল্লারহাট বাজারটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০ লাখ টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আড়িয়াল খাঁ নদ, সন্ধ্যা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বলেন, শুক্রবার দুপুরে তাদের বাড়ির সামনে বিশাল ফাটল দেখা দেয়। সন্ধ্যা নাগাদ চোখের পলকে ৮টি বসতবাড়ি ও ফসলের জমিসহ সন্ধ্যা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় দুবছর আগে মোল্লারহাট নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মোল্লার হাট কিছু অংশ রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি কাজের নামে অর্থ ব্যয় করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বর্তমানে ভাঙনের তীব্রতা বেশি থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে ওই গ্রামের বড় একটি অংশ। হুমকিতে পড়েছে এলাকার দক্ষিণ ভূতেরদিয়া তাবলিকুল ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, একটি মসজিদ, স্থানীয় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। ভাঙন-আতঙ্কে নদের তীরের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ আলী চৌকিদার বলেন, শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ বাড়িঘরসহ বিশাল এলাকা ফাটল ধরে দেবে যেতে থাকে। বিকেলের মধ্যে এসব এলাকা ও বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। দিনের বেলা হওয়ায় কোনোরকমে তারা প্রাণে বেঁচে গেছেন। সর্বস্ব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, চলতি অর্থবছরে আমরা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আর স্থায়ীভাবে ওই এলাকার ভাঙনরোধের জন্য একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ওই ভাঙনের কারণ এবং আরও যেসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে, সেটা নিরূপণ করবে। এরপর মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাব।
মন্তব্য করুন