ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লার একটি বাসায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে ‘আটকে’ থাকা মরিয়ম বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধাকে আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করে ছেলের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৯ মে) দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালত মরিয়ম বেগমের মতামত নেন—তিনি ছেলের কাছে যেতে চান কি না। সম্মতি জানানোর পর আদালত আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাকে একমাত্র ছেলে আব্দুল মতিনের জিম্মায় রাখার আদেশ দেন। মামলার পরবর্তী তারিখে মামলার দ্বিতীয় পক্ষ লিবা বেগমকে হাজির হওয়ার জন্য সমন ইস্যু করা হবে।
আব্দুল মতিন জানান, তার মা দীর্ঘদিন ধরে শহরের অনাথের মোড় এলাকার গণি ভবনের একটি ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী হিসেবে ছিলেন। সেখানে প্রবাসী আব্দুল কাদেরের স্ত্রী লিবা বেগম ও তাদের সন্তানরা থাকেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার মাকে আটকে রাখা হয় ও বেতন দেওয়া হয়নি। এমনকি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না।
রোববার (১৮ মে) ফরিদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি আইনের ১০০ ধারায় মামলা দায়ের করেন তিনি। আদালতের নির্দেশে কোতোয়ালি থানা পুলিশ সন্ধ্যায় ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় এবং মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, ফ্ল্যাটে প্রবেশে প্রথমে বাধা দেওয়া হলেও পরে দরজা খোলা হয়। উদ্ধার অভিযানে স্থানীয় সাংবাদিক ও একাধিক মানবাধিকারকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মরিয়ম বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তাকে নিয়মিত ঘর মোছা, বাচ্চাদের দেখাশোনা ও নানা কাজ করতে বাধ্য করা হতো। পর্যাপ্ত খাবারও দেওয়া হতো না।
অন্যদিকে বাসায় থাকা আব্দুল কাদেরের মেয়েরা দাবি করেছে, মরিয়ম বেগম তাদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় থাকতেন এবং তাকে আটকে রাখা হয়নি। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী তার বক্তব্যের ভিত্তিতে ছেলের জিম্মায় পাঠানো হয়।
আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মা অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন। এখন আমি চাই তিনি আমার সঙ্গেই থাকুন।’
পরে শুনানির দিন ১ জুন, সে দিন দ্বিতীয় পক্ষ আদালতে হাজির না হলে মরিয়ম বেগম স্থায়ীভাবে ছেলের সঙ্গেই থেকে যেতে পারবেন।
মন্তব্য করুন