সিলেটে এবার পানির দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। টাকা ধরে বিক্রি হলেও লেবুর যেন ক্রেতা নেই বাজারে। অথচ দুই মাস আগে রমজানে ন্যূনতম ১০০ টাকা হালি ছিল লেবুর। সিলেট নগরীর কিন ব্রিজ এলাকায় সেবুল মিয়ার হাতে টসটসে লেবু, হালি মাত্র ৪ টাকা তবুও নেই আগ্রহী ক্রেতা! বিক্রেতারা জানান, এখন মৌসুম বলে দাম কম। এবার লেবুর ফলনও বেশি।
এদিকে ঈদুল আজহায় আবারও দাম বাড়তে পারে বলে জানান বিক্রেতারা। শুধু কিন ব্রিজ এলাকায়ই নয়, কাঁচাবাজারের সবখানেই এখন লেবুর স্তূপ। তবুও ক্রেতারা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
জানা গেছে, গেল রমজান মাসের এক সপ্তাহ আগ থেকেই সিলেটে এক হালি লেবু কিনতে হয়েছে ৮০-১০০ টাকা। দেড় মাসের ব্যবধানে এই লেবুর হালি এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪ টাকায়। আর মাঝারি লেবুর হালি ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে জারা লেবুর দাম একটু বেশি, আকার ভেদে ১৫০ থেকে দুইশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল রমজান মাসে জারা লেবুর হালি হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। লেবুর মৌসুম থাকায় আমদানি বেশি থাকায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ২০ দিন পরেই কোরবানির ঈদে এই লেবু কত টাকায় বিক্রি হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা থাকলে দাম কিছুটা বাড়বে।
বুধবার (২১ মে) সরেজমিন সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট, কাজিটুলা, আম্বরখানা, টুকেরবাজার, মদীনা মার্কেট, বন্দরবাজার, কাজিরবাজার এবং রিকাবীবাজার এলাকা বাজারের লেবুর দামের একই চিত্র দেখা যায়। পাশাপাশি সবজির দামও তুলনামূলক কম। তবে কাঁচা ছোট সাতকড়ার হালি ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শাবানা নামের এক ক্রেতা বললেন, লেবুর মৌসুম থাকলেও আগামী ঈদে দেখবেন এই লেবুর হালিও ৫০ টাকার নিচে কেনা যাবে না। জয়নাল আবেদীন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এখন চাহিদা কম তাই দামও কম। চাহিদা বাড়লেই তারা দাম বাড়িয়ে দেবে।
নগরীর বন্দর বাজারে ভ্যানগাড়ি দিয়ে লেবু বিক্রি করছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুল করিম। তিনি ১২ পিস লেবু একটি মাঝারি পলিথিনে ভরে বিক্রি করছেন মাত্র ৩০ টাকায়। তিনি কালবেলাকে জানান, লেবুর চাহিদা কম। লেবু এখন পানির দামে বিক্রি হচ্ছে তবুও কেউ নিচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে যে কয়টি এলাকা লেবু উৎপাদনের জন্য পরিচিত, তার একটি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। চাহিদা পূরণে সিলেটের বাজারে আগে শ্রীমঙ্গল ও ময়মনসিংহ থেকে আসত লেবু। এখন সিলেটের বিভিন্ন টিলায় ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে লেবু, যা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছে। এসব লেবু তাজা অবস্থায় কেনা যায় বলে স্বাদ ও গন্ধ থাকে অটুট। নিজ এলাকায় উৎপাদন হওয়ায় দামেও কম। বর্তমানে সিলেট শহরতলি এলাকা, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার থেকে চাহিদার অর্ধেকের বেশি লেবু সরবরাহ করা হচ্ছে স্থানীয় বাজারগুলোতে।
লেবু চাষি সামছুল হক, শফিক মিয়া, লিয়াকত আলী জানান, এক সময় সেপ্টেম্বর মাসে লেবুর সিজন শেষ হয়ে যেত, তবে বর্তমানে সারা বছর লেবু থাকে। এখন উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ ও উচ্চ ফলনশীল চারা রোপণের কারণে সারা বছরই লেবু উৎপাদন হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক দীপক দাশ কালবেলাকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সিলেটে লেবুর চাষ ও উৎপাদন বেশি হয়েছে। মৌলভীবাজারেও লেবুর চাষ হয়েছে প্রচুর। সেখান থেকেও সিলেটের বাজারে লেবু আসে। চাহিদার তুলনায় ফলন বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। কমদামে এখন ভোক্তারা লেবু পাচ্ছে।
মন্তব্য করুন