চাঁদা না দেওয়ায় এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে বেধড়ক পিটিয়ে তাকে প্রকাশ্যে থুতু চাটিয়েছেন এক সাবেক ছাত্রদল নেতা। পরে আহত ওই সিএনজিচালক মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সোমবার (১৯ মে) দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নবীনের ব্যক্তিগত অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
সাবেক ওই ছাত্রদল নেতার নাম মো. নবীন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিজেকে যুবদলের নেতা বলে পরিচয় দিলেও যুবদলের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কয়েকজন জানান- নবীন যুবদলের কেউ নন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন মো. নবীন। তার নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়, পরিবহনের সিরিয়াল বাণিজ্য এবং পরিবহন সংগঠনের নামে জিপি আদায় করার নামে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী বাহিনী। ১০ হাজার টাকা চাঁদার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ওই সিএনজিচালককে চাপ দিয়ে আসছিলেন নবীন।
গত রোববার তাকে ফোন দিয়ে পরদিন সকাল (সোমবার) ১০টার মধ্যে চাঁদার টাকা নিয়ে তার ব্যক্তিগত অফিসে আসতে বলেন। পরদিন সময় মতো চাঁদার টাকা নিয়ে উপস্থিত না হওয়ায় তাকে পুনরায় ফোন দিয়ে গালাগাল করেন নবীন এবং সিএনজি মালিককে সঙ্গে নিয়ে অফিসে দেখা করতে বলেন।
দুপুর দেড়টার সময় সিএনজি মালিকসহ চালক নবীনের অফিসে উপস্থিত হন। ঠিক সময়ে অনুপস্থিত এবং চাঁদার টাকা না নেওয়ায় নবীন এবং তার অনুসারীরা চালককে বেধড়ক মারধর করেন এবং একপর্যায়ে থুতু ফেলে তা চাটাতে বাধ্য করেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগী চালক বলেন, মাঝেমধ্যেই আমার কাছে চাঁদার টাকা দাবি করেন নবীন। আমি গরিব মানুষ, ভাড়ায় গাড়ি চালাই। অনেকবার তারে আমি বলছি, ভাই আমার পক্ষে এত টাকা একসঙ্গে দেওয়া সম্ভব না। সোমবার আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে লোকজনের সামনে রড দিয়ে হাত বেঁধে পিটিয়েছে। আমার মালিক তার কাছে আমার হয়ে মাফ চেয়ে আট হাজার টাকা দিতেও রাজি হয়েছেন। তার পরও মাইর থামায় নাই। আরেকজনের মুখের থুতু আমারে খাওয়াইছে সবার সামনে। মানুষের মধ্যে কি কোনো দয়া-মায়া নাই? আড়াই ঘণ্টা পর আমাকে সেখান থেকে ছাড়লে আমার সিএনজির মালিক ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করান।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. নবীন বলেন, পরিবহনের সিরিয়াল নিয়ে অন্য চালকদের সঙ্গে তার (ভুক্তভোগী) দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য তাকে অফিসে ডাকা হয়। পরে বিষয়টা মিটমাট হয়েছে। এর বাইরে তার সঙ্গে কিছু ঘটেনি।
পরিবহন নেতা না হয়ে ঝামেলা মিটমাটে কেন তাকে অফিসে ডাকা হলো— জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আবেদন কায়সার বলেন, দল থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, কোথাও কোনো ধরনের অনিয়ম আমাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রমাণিত হলে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আমরা এ সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন