গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে আমাদের শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। ঘাম, পানিশূন্যতা, ক্লান্তি, অস্বস্তি- সব মিলিয়ে এ সময়টাতে শরীর ও মনের বাড়তি যত্ন দরকার। আর শরীর-মনের সঠিক যত্ন নিতে নিজের খাবারের খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরি। তাই দরকার এমন কিছু খাবার, যা সহজে পাওয়া যাবে তবে পুষ্টিকর, সাশ্রয়ী হবে। পাশাপাশি শরীরকে ঠাণ্ডা ও সতেজ রাখবে। চলুন আজ জেনে নেই এমন ৭টি গরমকালে খাওয়ার মতো খাবারের কথা, যেগুলো আমরা সহজেই পাব, এছাড়া খরচও হবে পকেটবান্ধব।
১. টক বা মিষ্টি দই
দই হলো গ্রীষ্মকালের জন্য আদর্শ একটি খাবার। এটি হজমে সহায়তা করে, শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং এতে থাকে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও পেটের জন্য ভালো ব্যাকটেরিয়া। ঘরে বানানো টক দই খাওয়া সবচেয়ে ভালো। এটি সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ। দুপুর বা বিকেলের খাবারে এক কাপ দই রাখুন। দেখবেন ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।
তবে খেয়াল রাখবেন, সম্ভব হলে সূর্যাস্তের পর দই খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
২. তালশাঁস বা খেজুর গুড়ের ঘোল
তালশাঁস গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ মিনারেল ও ভিটামিন। অন্যদিকে খেজুর গুড়ের ঘোল বা লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করা শরবত শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এগুলো খুবই সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী।
তালশাঁস এখন পাওয়া না গেলেও সহজেই আপনি খেজুর গুড়ের ঘোল বা লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করা শরবত খেয়ে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে পারেন।
৩. শসা ও টমেটো
শসার মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি থাকে, যা শরীরকে ঠাণ্ডা ও হাইড্রেটেড রাখে। টমেটোতে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। দুপুরের খাবারে বা স্ন্যাক্স হিসেবে সালাদ করে খাওয়া যেতে পারে এ সবজিগুলো। এগুলো সহজেই পাওয়া যায়, পাশাপাশি অন্যান্য সবজির তুলনায় সস্তা ও পুষ্টিকর।
৪. পাকা পেঁপে ও কলা
পেঁপে হজমে সাহায্য করে এবং গ্রীষ্মে শরীর পরিষ্কার রাখতে কার্যকর। কলা দ্রুত শক্তি বাড়ায়, পটাশিয়ামে ভরপুর। এই দুটি দেশি ফল সারা বছরই সহজলভ্য এবং গরমের দিনে শরীরে ভারসাম্য বজায় রাখতে দারুণ কাজ করে।
যাদের ঠাণ্ডার সমস্যা আছে, তারা সন্ধ্যার পর কলা খাওয়া এড়িয়ে চলতে পারেন।
৫. লেবু পানি বা লবণ-চিনি পানি
গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। এক গ্লাস লেবু পানি বা এক চিমটি লবণ-চিনি মিশিয়ে পানি পান করলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় থাকে। এটি আপনার শরীরের জন্য একেবারেই সাশ্রয়ী কিন্তু কার্যকর পানীয়।
৬. চিড়া-দই-আলু ভর্তা
গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার এটি। চিড়া ধুয়ে ঠাণ্ডা দইয়ের সঙ্গে খেলে তা হালকা, ঠাণ্ডা ও সহজে হজমযোগ্য হয়। অথবা চিড়ার সঙ্গে আলু ভর্তা বা ডাল দিয়ে খেলে এটি একটি পূর্ণ পুষ্টিকর খাবারে পরিণত হয়।
গরমে ভাত খেতে না চাইলে এটি চমৎকার বিকল্প।
৭. তেঁতুল ও বেলের শরবত
তেঁতুল ও বেল দুটিই শরীর ঠাণ্ডা রাখতে, হজমে সাহায্য করতে এবং শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে দারুণ কার্যকর। এগুলো দিয়ে তৈরি ঘরে তৈরি শরবত সহজে বানানো যায় এবং এসব বাজার থেকেও সস্তায় কেনা যায়।
এই গরমে শরীর সুস্থ, ঠাণ্ডা ও প্রাণবন্ত রাখতে হলে খাবার নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে এমন অনেক দেশি ও সাশ্রয়ী উপাদান, যা একটু সচেতন হলেই পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং গরমের কষ্ট কমিয়ে দেয়।
গরমে ঠাণ্ডা থাকতে, দেশি পুষ্টিকর খাবার হোক আপনার ভরসা।
মন্তব্য করুন