‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ —অমর গানের গীতিকার ও গায়ক আপেল মাহমুদকে শুনানিতে অংশ নিয়ে আবার প্রমাণ করতে হলো তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সোমবার (২ জুন) কুমিল্লা সার্কিট হাউসে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) শুনানির জন্য আপেল মাহমুদকে ডাকা হয়।
শুনানি শেষে জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন জানান, গীতিকার আপেল মাহমুদ নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে পেরেছেন।
শুনানি শেষে আক্ষেপ জানিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমি যে আপেল মাহমুদ, তা জীবিত থেকেই প্রমাণ করাতে হলো।’ তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা নই, সেই অভিযোগটি ভুল প্রমাণিত করতে শুনানিসহ নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হওয়ায় জামুকার সদস্যরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
এর আগে গত ৫ আগস্টের পর স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন আপেল মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধার নন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মে জামুকার উপপরিচালক (উন্নয়ন) ফাতেমা খাতুন আপেল মাহমুদের পক্ষে সব দলিল ও সাক্ষ্য উপস্থাপনের জন্য নোটিশ জারি করেন।
শুনানি শেষে আপেল মাহমুদ বলেন, ‘৩ নম্বর সেক্টরে আমি সরাসরি যোদ্ধা। ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের কমান্ডে যুদ্ধ করেছি। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা নরসিংদীর পাঁচদোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছি। নরসিংদী ফল করে (পতন হয়) ১০ তারিখে। আমরা চলে যাই ক্যাপ্টেন নাসিমের আন্ডারে আশুগঞ্জে। সেখানে আমরা ভৈরব রামনগর ব্রিজে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করি। সেখান থেকে রামনগর ব্রিজ, ভৈরব, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, চানপুর টি এস্টেট, তেলিয়াপাড়া টি এস্টেটে যুদ্ধ করি। তেলিয়াপাড়া ১৯৭১ সালে আমার শেষ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশুগঞ্জের যুদ্ধের সময় আমার বাঁ চোখের পাশে আঘাতপ্রাপ্তও হয়। পরে আমাকে আগরতলা নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার ভাইও আসেন। ২৫ মে কলকাতায় বড় করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলো। শুরুতেই আমাকে এবং জব্বার ভাইকে শরণার্থীদের জন্য একটি অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। আমরা সে সময় দুদিন অনুষ্ঠান করে অনেক শিল্পী পাই। ১ জুন থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমার ওপর যে দায়িত্ব ছিল, তা ২০০৬-এ রিটায়ারমেন্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতার বা রেডিও বাংলাদেশ যাই বলেন না কেন, সেই দায়িত্ব পালন করেছি। আমি তো মনোয়ার হোসেনের কোনো ক্ষতি করিনি। জানি না তিনি কেন এমন করলেন।’
জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন জানান, ৫ আগস্টের পরে কুমিল্লা জেলা থেকে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা নন, এমন অভিযোগ ওঠে। সেইসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা সার্কিট হাউসে দুটি কমিটিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আপেল মাহমুদ প্রমাণ করেছেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা।
শাহিনা খাতুন বলেন, ‘আপেল মাহমুদ যদি শুধু গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করার মতো ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকতেন, তাহলে তিনি সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খেতাব পেতেন। কিন্তু কাগজপত্রে প্রমাণ করেছেন তিনি সম্মুখ যোদ্ধাও ছিলেন। তাই আবারও তার বীর মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেল।’
আপেল মাহমুদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ গানের গায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এ ছাড়া ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ তার একটি উল্লেখযোগ্য গান। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন