রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫, ০৫:৩০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

‘বর্ষায় হাতে জুতা আর প্যান্ট তুলে হাঁটতে হয়’

সংস্কারের অভাবে বর্ষায় চলাচলের অযোগ্য রাস্তা। ছবি : কালবেলা
সংস্কারের অভাবে বর্ষায় চলাচলের অযোগ্য রাস্তা। ছবি : কালবেলা

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুরকা ইউনিয়নের শ্যামনাই থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত মাত্র ২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি আঞ্চলিক সড়ক। এই ছোট্ট পরিসরের রাস্তাটি এলাকাবাসীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি সংস্কারের অভাবে কার্যত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

বছরের বেশিরভাগ সময়েই রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা থাকলেও বর্ষা মৌসুমে এর অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। অল্প বৃষ্টিতেই সড়কের সর্বত্র কাদা জমে যায়। তখন এই রাস্তায় যানবাহন তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষকেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়।

সড়কটির পাশে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিদিন এই কাদা-মাখা, গর্তে ভরা রাস্তা পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় কোমলমতি শিশুদের। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা জানায়, একটু বৃষ্টি হলেই ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায়। স্কুলে পৌঁছাতে খুব কষ্ট হয়।

শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বিপাকে পড়েছেন চাকরিজীবী ও রোগীরা। অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে সময়মতো পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়ে এই রাস্তার কারণে।

স্থানীয় বাসিন্দা লিমন, আব্দুল্লাহ, শাহাদাত ও লালচান বলেন, আমরা বারবার জনপ্রতিনিধিদের বলেছি। তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। সাবেক এমপি এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কেউই কোনো কাজ করেননি।

তাদের দাবি, এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে শ্যামনাই ও দুর্গাপুর গ্রামের প্রায় ১০/১২ হাজার মানুষ। রাস্তার করুণ দশার কারণে কৃষকরা ফসল বাজারে নিতে পারছেন না। কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, ধান কাঁধে করে নিতে হয়। গাড়ি আসে না, কারণ রাস্তা নেই। বাজারে নিতে গিয়ে অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়।

এক পথচারী জাফর বলেন, আমি এই এলাকার মেয়ের জামাই। বিয়ের পর থেকে দেখি রাস্তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্ষায় হাতে জুতা আর প্যান্ট তুলে হাঁটতে হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সরকার ও সাবেক এমপি অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি। এলাকার মানুষ এখন আশাহত, তারা মনে করছেন সরকার হয়ত এই অঞ্চলটিকে গুরুত্বই দিচ্ছে না।

ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ন‌ওশের আলী কালবেলাকে বলেন, আমি উপজেলা অফিসে গিয়ে এই বিষয়ে কথা বলবো যেন, অতি দ্রুত কাজটি করা যায়।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির কালবেলাকে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা দ্রুত রাস্তাটি পাকা করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, একটি ভালো রাস্তা, শুধু চলাচলের সুবিধা নয়। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

এই সড়কটির উন্নয়ন না হলে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, পুরো অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগের প্রতি কতটা গুরুত্ব দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৈঠকের পর মামদানির প্রশংসায় ট্রাম্প

শ্রমিকদের স্বার্থে পাঁচ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান শেখ বাবলুর

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মীদের নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের দাবি

তারাগঞ্জের কালেক্টরেট বামনদিঘি ইকোপার্ক

ইরাকের সরকার গঠনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

লেবাননে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনকে শান্তি পরিকল্পনা মানতে হবে: ট্রাম্প

ভেড়ামারায় দুর্বৃত্তের গুলিতে গরু ব্যবসায়ী নিহত

রুয়েট প্রাক্তন ছাত্রদল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি তুষার, সম্পাদক হাবীব

ভূমিকম্পে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৪১ জন আহত

১০

ক্যারিয়ার শেষে কত উইকেট চান জানালেন তাইজুল

১১

 ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে রাজউকের তাৎক্ষণিক পরিদর্শন

১২

মেসিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যা বললেন ফ্লিক

১৩

গৌহাটি টেস্টের আগে ভারত শিবিরে দুঃসংবাদ

১৪

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১৫

এই প্রজন্মে অন্ধ আনুগত্য, ভাই পলিটিক্স চলবে না : শিবির সভাপতি

১৬

নাটকীয় জয়ের পরও নিজের ভুলে হতবাক আকবর

১৭

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : প্রধান উপদেষ্টা

১৮

নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ 

১৯

ভূমিকম্পে ছেলের পর এবার চিকিৎসাধীন বাবার মৃত্যু

২০
X