সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুরকা ইউনিয়নের শ্যামনাই থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত মাত্র ২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি আঞ্চলিক সড়ক। এই ছোট্ট পরিসরের রাস্তাটি এলাকাবাসীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি সংস্কারের অভাবে কার্যত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বছরের বেশিরভাগ সময়েই রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা থাকলেও বর্ষা মৌসুমে এর অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। অল্প বৃষ্টিতেই সড়কের সর্বত্র কাদা জমে যায়। তখন এই রাস্তায় যানবাহন তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষকেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়।
সড়কটির পাশে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিদিন এই কাদা-মাখা, গর্তে ভরা রাস্তা পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় কোমলমতি শিশুদের। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা জানায়, একটু বৃষ্টি হলেই ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায়। স্কুলে পৌঁছাতে খুব কষ্ট হয়।
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বিপাকে পড়েছেন চাকরিজীবী ও রোগীরা। অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে সময়মতো পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়ে এই রাস্তার কারণে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিমন, আব্দুল্লাহ, শাহাদাত ও লালচান বলেন, আমরা বারবার জনপ্রতিনিধিদের বলেছি। তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। সাবেক এমপি এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কেউই কোনো কাজ করেননি।
তাদের দাবি, এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে শ্যামনাই ও দুর্গাপুর গ্রামের প্রায় ১০/১২ হাজার মানুষ। রাস্তার করুণ দশার কারণে কৃষকরা ফসল বাজারে নিতে পারছেন না। কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, ধান কাঁধে করে নিতে হয়। গাড়ি আসে না, কারণ রাস্তা নেই। বাজারে নিতে গিয়ে অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়।
এক পথচারী জাফর বলেন, আমি এই এলাকার মেয়ের জামাই। বিয়ের পর থেকে দেখি রাস্তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্ষায় হাতে জুতা আর প্যান্ট তুলে হাঁটতে হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সরকার ও সাবেক এমপি অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি। এলাকার মানুষ এখন আশাহত, তারা মনে করছেন সরকার হয়ত এই অঞ্চলটিকে গুরুত্বই দিচ্ছে না।
ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মো. নওশের আলী কালবেলাকে বলেন, আমি উপজেলা অফিসে গিয়ে এই বিষয়ে কথা বলবো যেন, অতি দ্রুত কাজটি করা যায়।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির কালবেলাকে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা দ্রুত রাস্তাটি পাকা করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, একটি ভালো রাস্তা, শুধু চলাচলের সুবিধা নয়। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এই সড়কটির উন্নয়ন না হলে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, পুরো অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগের প্রতি কতটা গুরুত্ব দেন।
মন্তব্য করুন