চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যাসহ পাঁচ মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের সাবেক মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (০৩ জুন) দুপুর ১টার সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতের সহকারী পিপি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার হত্যা মামলায় জামিন আবেদনের শুনানির ধার্য দিন ছিল। অন্য চার মামলায় বিশেষ জামিন আবেদন করা হয়। সব মামলার শুনানি হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে আমরা জামিনের বিরোধিতা করেছি। শুনানি শেষে আদালত সব মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
মামলা পাঁচটি হলো- আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলা এবং গত বছরের ২৬ নভেম্বরের ঘটনায় ভাঙচুর-হামলা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পুলিশের করা তিনটি এবং আলিফের ভাই খানে আলমের করা আরেকটি মামলা।
জানা গেছে, গত বছরের ২৬ নভেম্বরের ঘটনায় পুলিশের করা তিনটি মামলায় এবং আইনজীবী আলিফের ভাইয়ের করা একটি মামলায় গত ৬ মে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এর আগের দিন আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ আসে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, পাঁচটি মামলায় তাকে (চিন্ময়) গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। পাঁচটা মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি পুলিশ কাস্টডিতে ছিলেন। হাইকোর্ট যখন অন্য মামলায় তার রুল অ্যাবসুলিউট করেছেন, একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়। তখনই এর একদিন পরে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যেটা মেলাফাইড ইনটেনশন। যেখানে তার কোনো অভিযুক্ততা নেই।
তিনি আরও জানান, তিনি চরমভাবে অসুস্থ। আমি কোর্টকে বলেছি, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এখন তার ট্রিটমেন্ট দরকার। এজন্য একটা দরখাস্ত দেওয়া আছে। আদালত শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। অবশ্যই আমরা যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেব। মেট্রোসেশন কোর্টে আমরা জামিন আবেদন করব।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।
সহিংসতার ঘটনায় সেদিন রাতেই তিনটি মামলা করেছিল পুলিশ। আর ২৯ নভেম্বর আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলা করেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। সেদিন আইনজীবীদের ওপর হামলা, বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন আলিফের ভাই খানে আলম, যেখানে ১১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
মন্তব্য করুন