কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ১০:৫৪ এএম
আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

আ.লীগ নেতাকে সুবিধা দিতে শত কোটির পাথর দেওয়া হলো ১৭ কোটিতে

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ নেতাকে বিশেষ সুবিধা দিতে ১০০ কোটি টাকার বেশি দামের পাথর, নিলামের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৭ কোটি টাকাতে। সিলেটের কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী ‘লোভা নদী’র জব্দকৃত এক কোটি ৫ হাজার ঘনফুট পাথর নিলামে এমন ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, প্রায় ৫৬ লাখ ঘনফুট পাথর গোপন রেখে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে নিলাম সম্পন্ন করেছে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। স্থানীয় বাজারমূল্যে এ পাথরের মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা হলেও, বিএমডির একাধিক কর্মকর্তার যোগসাজশে ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর মাত্র ২১ কোটি টাকায় নিলাম করা হয়। পাথর জব্দের পাঁচ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতা পলাশের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেটের কাছে এগুলো পানির দরে বিক্রি করা হয়। এ বিষয়ে উচ্চ আদালত নিলাম কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএমডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাঁচ বছর আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশ অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ পাথর মজুত করেন। এই পাথর নিলামের বিরুদ্ধে ‘প্রকৃত তথ্য গোপনের’ অভিযোগ এনে সামী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে আবেদন করে। আদালত তখন নিলাম কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন।

তিনি বলেন, তবে বিএমডির কিছু কর্মকর্তা নিলাম কার্যকর করতে কাগজে-কলমে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। তারা আদালতের আদেশ এড়াতে নথিপত্রে ‘রিট বহির্ভূত ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর’ নিলাম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অভিযোগ রয়েছে, নিলামকারীকে বিশেষ সুবিধা দিতে বিএমডির পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ছরোয়ার হোসেন সরাসরি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এমনকি, নিলামের কার্যাদেশ বাস্তবায়নের সময় তিনি কানাইঘাট সীমান্ত এলাকায় জয়ী প্রতিষ্ঠানের দেওয়া গরুর ভোজেও অংশ নেন।

তিনি আরও জানান, নিলাম কার্যকর করতে বিএমডির কর্মকর্তারা পরিকল্পিতভাবে ‘মামলার আওতাবহির্ভূত’ শব্দটি নথিতে যুক্ত করেন। কিন্তু বাস্তবে যেসব গ্রামের নাম দেখিয়ে ওই এলাকাগুলোকে মামলাবহির্ভূত দাবি করা হয়েছে, সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনো পাথর মজুত নেই- মাত্র অল্প পরিমাণই রয়েছে। মূলত গোপন করা ৫৬ লাখ ঘনফুট পাথর অন্যত্র মজুত ছিল।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএমডির পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ছরোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, তিনি এক ঘণ্টা পর কথা বলবেন। এরপর তিনি কলটি কেটে দেন এবং পরবর্তীতে আর যোগাযোগে সাড়া দেননি।

কানাইঘাট এলাকার পাথর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জব্দ করা লোভাছড়া এলাকার পাথরের দাম ছিল প্রতি ঘনফুট ৯০ টাকা। অথচ বিএমডির কর্মকর্তারা রহস্যজনকভাবে পাঁচ বছর আগের সেই দরেই নিলাম সম্পন্ন করেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি ঘনফুট পাথরের দাম ১২৫ টাকা। সে হিসেবে এক কোটি ঘনফুট পাথরের প্রকৃত মূল্য দাঁড়ায় ১২৫ কোটি টাকা।

সর্বশেষ নিলামের তথ্য অনুযায়ী, ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথরের বাজারমূল্য প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু নথিপত্রে মাত্র ৩৬ কোটি টাকার হিসেব দেখিয়ে নিলাম ডাকা হয় এবং মাত্র ১৭ কোটি টাকায় সেটি কার্যকর করা হয়। এতে করে নিলাম জয়ী প্রতিষ্ঠানকে বিপুল আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারিগুলোর সর্বশেষ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ৪ মে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সভায় উপস্থিত বিএমডির প্রতিনিধি জানান, সিলেট জেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে জব্দ করা এক কোটি ঘনফুট পাথরের মধ্যে মামলাবহির্ভূত হিসেবে চিহ্নিত ৪৪ লাখ ২৩ হাজার ১১৩ ঘনফুট পাথর উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এ বিক্রয় থেকে আনুমানিক ২১ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংক্রান্ত নথিপত্রে প্রকৃত তথ্য গোপন করে সরকারের অন্তত শত কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে, আর এর বিপরীতে কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, নিলাম কার্যক্রমকে ঘিরে বিপুল অঙ্কের অর্থের ভাগবাঁটোয়ারা হয়েছে বিভিন্ন মহলের মধ্যে।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ‘মামলাবহির্ভূত’ হিসেবে উল্লেখ করে ৪৪ লাখ ২৩ হাজার ১১৩ ঘনফুট পাথরের মজুত দেখিয়ে নিলাম আহ্বান করা হয়। প্রতি ঘনফুট ৭৫ টাকা দরে মোট ৩৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৫ টাকার ভিত্তিমূল্যে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই নিলামপ্রক্রিয়ার নেপথ্যে ছিলেন কানাইঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশ, যিনি এলাকায় ‘পাথরখেকো’ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালে তিনি বিএমডির দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সহায়তায় অবৈধভাবে পাথরগুলো মজুত করেন। পাঁচ বছর পর, আবারও তাদের সহায়তায় তিনি এই বিপুল পরিমাণ পাথর পানির দরে নিলামের মাধ্যমে নিজ নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নিলাম কার্যক্রমটি একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যাতে অন্য কোনো পক্ষ পাথরের অংশ না পায়। নিলাম কার্যকর হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দ্রুতগতিতে পাথর অপসারণ শুরু করে।

খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হাবীব বলেন, লোভাছড়ার পাথর নিলামের বিষয়ে আমার জানা আছে। তবে কী পরিমাণ পাথর বা কত দামে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, তা না দেখে এখনই সঠিকভাবে বলতে পারছি না।

তথ্যসূত্র : যুগান্তর

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যে ৫ অভ্যাস জীবন বদলে দেবে

সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের আদেশে থাকতে হবে পাসপোর্ট নম্বর

এনসিপির সমাবেশে ড্রোন ক্যামেরা দেখে লোকজনের দিগবিদিক দৌড়

কী হয়েছিল জসীম-পুত্র ব্যান্ড তারকা রাতুলের

বিদেশি ঋণ পরিশোধে নতুন রেকর্ড

জরুরি সভা ডেকেছে ছাত্রদল

‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত নয়’

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর

টাঙ্গুয়ার হাওর / ‘হাওরের সুলতান-৪’ হাউসবোটের বিরুদ্ধে পর্যটকের মামলা

বিয়ের প্রলোভনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, দুজনের যাবজ্জীবন

১০

শিশু শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ, ভ্যানচালককে গণধোলাই

১১

রাকসু নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাবি : আস্থার সংকটে প্রশাসন

১২

স্টেশনের সব ফ্যান খুলে নিল রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ

১৩

মহানবীকে (সা.) কটূক্তির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, ১৩ বাড়িতে ভাঙচুর

১৪

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের নয়া এমডি শাহিরুল হাসান

১৫

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জাগপার

১৬

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ১৮

১৭

ভারত চীন সিঙ্গাপুরের মেডিকেল টিমকে কৃতজ্ঞতা প্রধান উপদেষ্টার

১৮

ছেলের হাতে বাবা খুন

১৯

ফ্যাসিবাদের শাসন ব্যবস্থাকেও বিদায় করা হবে : জোনায়েদ সাকি

২০
X