জামালপুরের ইসলামপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা ট্রেনে সিট না পেয়ে উত্তপ্ত ছাদে চড়ে ঢাকায় ফিরছেন। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার ছুটি শেষে আজ থেকে অফিস খোলা, তাই সিট না পেলেও যেতে হবে। নিরুপায় হয়ে তারা ট্রেনের ছাদকেই বেছে নিয়েছেন।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনটি প্রতিদিন দুপুরের দিকে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে ইসলামপুর রেলস্টেশন হয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা করে। গত দুই দিন থেকে ছিল উপচেপড়া ভিড়, ট্রেনের সিটের বিপরীতে যাত্রী সংখ্যা অত্যধিক বেশি হওয়ায় প্রচণ্ড রোদেও ট্রেনের ছাদে চড়তে বাধ্য হয়েছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্টারসিটি গাড়ি তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ট্রেনের টিকিট সরকার যাত্রীদের সুবিধার্থে শতভাগ অনলাইনে দিয়েছে। অধিকাংশ যাত্রী অনলাইনে টিকিট কাটায় পারদর্শিতা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়, যা চলে যায় কালোবাজারিদের কব্জায়। একটি টিকিট আকাশচুম্বী দামে কিনে নিতে হয় কালোবাজারির হাত থেকে। সিটের নির্ধারিত ভাড়া শোভন চেয়ারের মূল্য ইসলামপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকা ২৫০ টাকা। কালোবাজারিদের হাতে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে এক টিকিট ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঈদের মধ্যে যা বেতন ও বোনাস হিসেবে পেয়েছিলাম তা বাজার করে শেষ। তাই বেসরকারি ট্রেনে স্বল্প মূল্যে ভাড়া দুই টিকিট নিলে একটা সিট দেয়, তাই সিটের টিকিট না পেয়ে ছাদে ওঠা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
দূরদূরান্ত থেকে আসা খেটে খাওয়া দিনমজুরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় এই ট্রেনের ভাড়া কম। তাই কষ্ট করে হলেও তারা ছাদে চড়ে যাত্রা শুরু করেছেন।
পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলা থেকে আসা কয়েকজন যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ট্রেনের ছাদে প্রচণ্ড রোদ। ছাদ এতটাই উত্তপ্ত হয়েছে যে সেখানে ডিম দিলে ভাজা হয়ে যাবে। আমরা ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা কীভাবে সেখানে থাকব? আল্লাহর ওপর ভরসা করে রওনা দিলাম।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর মো. ইসরাফিল কালবেলাকে বলেন, ‘এই তীব্র গরমের ভেতর ট্রেনের ছাদে কীভাবে তারা ঢাকা যাবে বিষয়টি চিন্তা করলে অবাক লাগে। মানুষ নিরুপায় হয়েই যাচ্ছে, বেসরকারি ট্রেন হওয়ায় আমাদের তেমন কিছু করণীয় নেই।’
ইসলামপুর কমিউটার ট্রেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের ট্রেনের যাত্রীর আসন সংখ্যা সীমিত, শনিবার এই ট্রেনে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী ঢাকা রওনা করেছেন। আজও প্রচুর যাত্রী হবে, এত সিট আমরা কীভাবে দেব? দু-তিনটি জেলার লোক এই ট্রেনের ওপর ভরসা করে ঢাকা যাতায়াত করে। তিনি এই রুটে যেন আরও দুটি ট্রেন দেওয়া হয় সেই অনুরোধ করেন।
ইসলামপুর রেলস্টেশন মাস্টার মো. শাহীন মিয়া কালবেলাকে বলেন, দেওয়ানগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী চারটি ট্রেন চলাচল করে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কম্পিউটার ট্রেনসহ চারটি ট্রেনের মোট সিটের সংখ্যা ৪০০, আর যাত্রীসংখ্যা ৮ থেকে ১০ হাজার। এত অধিকসংখ্যক যাত্রীদের সিট দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই তারা ছাদে উঠে পড়ে। প্রচণ্ড রোদে যেখানে রুমের ভেতর থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এই যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা রওনা করেছেন।
মন্তব্য করুন