খুলনার পাইকগাছায় সরকারি ৩৬ দশমিক ৪৫ একর অর্থাৎ ১১০ বিঘা প্রবাহমান খাস খাল বিলান চাষাবাদের জমি দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেরা বাদী-বিবাদী হয়ে আদালতে মামলা করে রায় পেলেও পানি সরবরহের সরকারি গেটের খাল হওয়ায় ১৬টি গ্রামের জনগণ দখলে যেতে দেয়নি।
সরকারি খাল হওয়া বিষয়টি জানার পর সরকারের পক্ষ থেকে খুলনা জেলা প্রশাসক এ বিষয় নিয়ে আদালতে দেওয়ানি মামলা করেছে।
১৬ গ্রামের হাজারো মানুষ গণস্বাক্ষর করে অবৈধ দখলদার নির্মল চন্দ্র মন্ডল ও মনোহর মন্ডলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। নির্মল চন্দ্র মন্ডল ও মনোহর উপজেলার রামচন্দ্র নগর এবং নাবা গ্রামের মৃত অতুল কৃষ্ণ মন্ডলের ছেলে।
সম্প্রতি নির্মল ও মনোহার খালটি দখলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে খালের দুমাথায় বাঁধ দেয়। বিষয়টি জানার পর শত শত এলাকাবাসী সে বাঁধ কেটে দিয়ে দখলবাজদের তাড়িয়ে দেয়।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কামারাবাদ ও ভৈরবঘাটা মৌজার ও ১৬টি গ্রামের পানি সরবরাহের একমাত্র খাল এটি। যা বিলান জমি দেখিয়ে জাল-জালিয়াতির কাগজ তৈরি করে সরকারের চোখ ফাঁখি দিয়ে নিজেরা বাদী-বিবাদী হয়ে ১৯৮৬ সালে দেওয়ানি মামলা করে ১৯৯০ সালে রায় পান। সেখানে সরকারকে বিবাদী করা হয়নি। অথচ এ খাল সরকারি এবং সরকারের নামে সর্বশেষ চূড়ান্ত রেকর্ড হয়েছে।
এ খাল দিয়ে বারুইডাঙ্গা, শ্যামনগর, মালথ, কাজিমছা, নাবা, সলুয়া, প্রতাবকাটি, কামারাবাদসহ ১৬ গ্রামে পানি সরবরাহ হয়। খালের স্লুইসগেট জনগণের ব্যবহার্য সম্পদ। এলাকার অনেকেই এখালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। ১৬টি গ্রামের হাজার হাজার হাজার বিঘা জমির পানি এ খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কৃষি চাষাবাদ হয় এ খালের পানি দিয়ে।
খাসখাল উন্মুক্তের দাবিতে স্থানীয় মো. আশরাফ আলী খাঁ বাদী হয়ে ও কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান এবং চারজন ইউপি সদস্যসহ প্রায় এক হাজারজনের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ খুলনা জেলা প্রশাসক দপ্তরে দেওয়া হয়েছে।
মালথ গ্রামের মজিদ মোড়ল বলেন, খালটি যদি দখলবাজারা দখল করে নেওয়ার কোনো প্রকার অপচেষ্টা করে তাহলে সর্বসাধারণ আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। জালিয়াতকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
মালথ গ্রামের হারুন গাজী জানান, এলাকার চিহ্নিত জাল-জালিয়াতির হোতা নির্মল চন্দ্র মন্ডল ও মনোহর খাস খালটি দখল করার চেষ্টা করছে।
ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন জানান, আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি এ খালটি উন্মুক্ত। ওই খাল দিয়ে অনন্ত ১৪-১৫ গ্রামের পানি সরবরাহ করে। সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ এটি কখনো ইজারাও দেয়নি। এখন কিছু জালিয়াত চক্র এটি দখলে নেওয়ার পায়তারা করছে।
অভিযুক্ত নির্মল মন্ডল জানান, আমরা আদালতের রায় পেয়ে জমিতে বাধ দিয়ে মৎস্য চাষ করতে গিয়েছি।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখারুল ইসলাম শামীম জানান, এরমধ্যে বহুল আলোচিত নাছিরপুর খাল অবমুক্ত করেছি। এটাও তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি খাল কেউ অবৈধভাবে দখলে রাখতে পারবে না।
মন্তব্য করুন