ভোলার চরফ্যাশনে ফিল্মি কায়দায় বোরকা পরে স্ত্রীকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে নির্জন ঘরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী ফরহাদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার সুমাইয়া বর্তমানে চরফ্যাশন উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বুধবার (৯ জুলাই) সকালে উপজেলার দুলারহাট থানার আবু বকরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সুমাইয়া চরফ্যাশন পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহর মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী ফরহাদ একই ইউনিয়নের লিটন সিকদারের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমাইয়া জানান, দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয় ফরহাদের সঙ্গে। বিয়ের পর জানতে পারেন, তার স্বামী মাদকাসক্ত। মাদক সেবন করে তিনি বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। এ অবস্থায় সংসার চালানো সম্ভব নয়—এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রায় আট মাস আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে যান তিনি এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন।
বুধবার সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় সুমাইয়ার পেছন থেকে একটি সিএনজি এসে থামে। তিনি সিএনজিতে উঠলে চালক জানান, পৌর শহরের বাইরে তার স্ত্রী অপেক্ষা করছেন। এরপর সিএনজি তাকে নিয়ে একটি অচেনা রাস্তা ধরে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর গন্তব্যে পৌঁছালে তিনি দেখতে পান, বোরকা পরিহিত যে নারী সিএনজিতে বসা ছিলেন, তিনি আসলে তার স্বামী ফরহাদ।
ফরহাদ সুমাইয়াকে নিজ বাড়ির একটি নির্জন ঘরে নিয়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালান। এ সময় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে সুমাইয়া ‘বাবা’ বলে ডাকলেও রেহাই পাননি। পরবর্তী সময়ে কোনোভাবে ঘর থেকে পালিয়ে পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি স্থানীয়দের সবকিছু খুলে বলেন। পরে তারা সুমাইয়ার পরিবারকে খবর দিলে বাবা-মা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সুমাইয়ার বাবা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘জামাতা ফরহাদ মাদকাসক্ত হওয়ায় অনেক আগেই মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু যেভাবে তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তা অমানবিক। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ফরহাদ আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দুলারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফ ইফতেখার কালবেলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ হাসপাতাল গিয়ে ভিকটিমকে দেখবে এবং পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মন্তব্য করুন