দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবাদী ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করে জনগণের নিজস্ব গঠনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের প্রথম প্রয়োজন একটি গণমুখী গঠনতন্ত্র। জনগণকে বুঝাতে হবে গঠনতন্ত্র কী এবং কেন তা প্রয়োজন।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবিধান বনাম গঠনতন্ত্র; দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, গঠনতন্ত্র ও সংবিধান এক নয়। সংবিধান একটি আইনি কাঠামো মাত্র, যেখানে গঠনতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র ও সংগঠন পরিচালনার মূল দর্শন। ড. কামাল হোসেন সংবিধানকে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন, যা জাতির জন্য বিভ্রান্তিকর।
চট্টগ্রাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, হাটহাজারীর মতো অঞ্চলে মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি অবস্থিত, যেখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক আচারে অংশ নিচ্ছেন। এ ঐতিহ্য যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। আর কখনো যেন দাড়ি-টুপি বা পাঞ্জাবি পরা কাউকে জঙ্গি কিংবা গেরুয়া বসন পরা কাউকে বিদেশি দালাল হিসেবে আখ্যায়িত না করা হয়।
চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও বন্দরের নিরাপত্তা তুলে ধরে এ রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, চট্টগ্রাম হলো দেশের অর্থনীতির হৃদয়, যেখানে বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। এ শহরের ক্ষতি মানে দেশের মারাত্মক ক্ষতি। এ কারণেই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বন্দরকে ঘুষ-দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে কাস্টমসকে বন্দর থেকে আলাদা করতে হবে। দুর্নীতি করার জন্য পণ্য দিনের পর দিন বন্দরে রেখে দেয় কাস্টমস কর্মকর্তারা। খেয়াল রাখতে হবে বন্দর যাতে বিদেশি স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়। দেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে সে লক্ষ্যে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সব ধরনের ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদ আছে, ধর্ম নিরপেক্ষতার ফ্যাসিবাদ, ধর্মান্ধতার ফ্যাসিবাদ- সব ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করতে হবে। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করে জনগণের নিজস্ব গঠনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল হক, অধ্যাপক আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সাইমা আলম, রাষ্ট্রচিন্তক মেজর (অব.) ফেরদৌস, কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, বাসসের সিনিয়র সাংবাদিক মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, দৈনিক এই বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ওয়াহিদ জামান এবং বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মওলা মুরাদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন