প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন গোসাইস্থল পদ্মবিল আজ হুমকির মুখে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের বাড়াই গ্রামে অবস্থিত প্রায় ১৬ একরজুড়ে বিস্তৃত এ বিল যেন একখণ্ড জীবন্ত স্বর্গ। বিলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা নীল, সাদা ও হলুদ পদ্মফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য, সঙ্গে সাদা ও নীল শাপলার মোহনীয় উপস্থিতি এখানে তৈরি হয়েছে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ।
প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। কেউ আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা প্রাকৃতিক নিসর্গের খোঁজে একান্ত একাকী ভ্রমণে। তবে এই ভিড়ই এখন পদ্মবিলের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসচেতন পর্যটক আর নজরদারির অভাব—প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের মূল কারণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক দর্শনার্থী পদ্মফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ কেউ নৌকা থেকে নেমে পানিতে নেমে গাছ ভেঙে ফেলছেন। এমন কর্মকাণ্ডে ধীরে ধীরে বিলটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। দর্শনার্থীদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, আবর্জনা ফেলা এবং অপর্যাপ্ত নৌকার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পদ্মবিলের এই অনন্য সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে এখনই প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা।
বাড়াই গ্রামের বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, ‘এই বিলটা আমাদের গর্ব। কিন্তু এখন অনেকেই আসে, ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়, কেউ কেউ পানিতে নেমে গাছ ভেঙে ফেলে। দেখার কেউ নেই। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর কিছুই থাকবে না।’
নোয়ামুড়া গ্রামের বাসিন্দা বাছির মিয়া বলেন, ‘আমরা চাই বিলটা বাঁচুক। কিন্তু কেউ নিয়ম মানছে না। প্রশাসনের নজরদারি দরকার। ফুলতো ফুটবে, কিন্তু মানুষ যদি এমনভাবে নষ্ট করে, তাহলে আমাদের পরের প্রজন্ম শুধু গল্প শুনবে।’
এ বিষয়ে কসবা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ছামিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘গোসাইস্থল পদ্মবিল আমাদের এলাকার এক অসাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ। ইতিমধ্যে আমরা ফুল ছেঁড়াসহ যেকোনো অনিয়ম রোধে নিয়মিত নজরদারি শুরু করেছি। পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক নির্দেশনা বোর্ড বসানো, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং নৌকা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনার পরিকল্পনা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এই বিল রক্ষায় প্রশাসন সর্বোচ্চ আন্তরিক। স্থানীয়দের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। সবাইকে অনুরোধ করব—পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করুন, কিন্তু ধ্বংস নয়।’
মন্তব্য করুন