ক্রিকেট দুনিয়া বড় রকমের পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে। একদিকে আবারও চালু হচ্ছে বহু আলোচিত টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ঘিরে বাড়ছে অনিশ্চয়তা। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসির বার্ষিক সভায় উঠে এসেছে এক যুগান্তকারী প্রস্তাব—টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা সীমিত করা হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটটি এখন আর্থিকভাবে কেবল গুটিকয়েক দেশের পক্ষেই টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাকিদের জন্য টেস্ট চালিয়ে যাওয়া হয়ে পড়ছে বোঝা স্বরূপ। সম্প্রচার আয়, দর্শক আগ্রহ ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহু বোর্ড।
এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ২০২৭ সালের পরবর্তী ক্যালেন্ডার গঠনের জন্য আইসিসি একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে আছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও টড গ্রিনবার্গ, ইংল্যান্ড বোর্ডের প্রধান রিচার্ড গোল্ড এবং আইসিসির নতুন প্রধান নির্বাহী সঞ্জোগ গুপ্ত।
সঞ্জোগ গুপ্ত বলেছেন,
আপনাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি এমন একটি পণ্য বারবার পরিবেশন করা হয় যেটা কেউ চায় না, তাহলে সেই পণ্যও ধ্বংস হবে, এবং তার চারপাশের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঠিক যেমন ব্ল্যাকবেরি ফোন হারিয়ে গেছে, টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও সেটাই হতে পারে।
এই মনোভাব থেকেই ধারণা করা হচ্ছে—শুধু কয়েকটি আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশই টেস্ট মর্যাদা ধরে রাখতে পারবে, বাকিদের বাইরে রাখা হতে পারে ভবিষ্যতের ক্যালেন্ডার থেকে।
আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে—এই সদ্য টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দেশগুলোর জন্য এটি ভয়াবহ দুঃসংবাদ। অবকাঠামো, বাজার এবং দর্শক চাহিদার দিক থেকে তারা এখনও পিছিয়ে। এমনকি বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পুরোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জ কম নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি একবার টেস্ট দলের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তাহলে এই ফরম্যাটটি হয়ে উঠবে কেবল ‘এলিট ক্লাব’-এর খেলা। এতে করে বিশ্বজুড়ে টেস্ট ক্রিকেটের বিস্তার নয়, বরং সংকোচনের দিকেই এগোবে।
ফিরছে টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
এই সম্মেলনে আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত এসেছে—ফের চালু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো।
২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই টুর্নামেন্ট এবার ফিরছে সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায়। তবে এখন বিশ্বজুড়ে এত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ থাকায়—একই মালিকানাধীন দলের খেলোয়াড়রা কোন দলকে প্রতিনিধিত্ব করবে, সেই প্রশ্নে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অলিম্পিক ও আফগান নারী দল নিয়ে সিদ্ধান্ত
আইসিসি ঘোষণা করেছে, ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির জন্য বাছাই পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়েছে। পাশাপাশি আফগানিস্তানের নির্বাসিত নারী দলকে বছরে ১০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
একদিকে টি-টোয়েন্টি লিগের বাণিজ্যিক জয়যাত্রা, অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র সংশয়—ক্রিকেট আজ এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে। আর খুব শিগগিরই হয়তো আমরা দেখতে যাচ্ছি, ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাকের এই লড়াই কেবল হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন