নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ১০:১১ পিএম
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ১০:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ওরাও তো আমার সন্তান, একা রেখে কী করে চলে আসি?’

বাঁ থেকে স্বামী মনসুর হেলাল ও মাহরিন চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
বাঁ থেকে স্বামী মনসুর হেলাল ও মাহরিন চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

‘ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি? আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি তাদের বাঁচাতে।’ হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর আগে স্বামী মনসুর হেলালকে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় মাহরিন চৌধুরীকে।

এর আগে সোমবার (২১ জুলাই) রাতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

দাফন শেষে মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, মাহরিন অনেক ভালো মানুষ ছিল। ওর ভেতরে সবাইকে ঘিরে একটা মায়া ছিল। আগুন লাগার পর যখন অন্যরা দৌড়াচ্ছিল, ও তখন বাচ্চাদের বের করে আনছিল। কয়েকজনকে বের করার পর আবার ফিরে গিয়েছিল বাকি বাচ্চাদের জন্য- সেই ফেরাটা আর শেষ হয়নি। সেখানেই আটকে পড়ে, সেখানেই পুড়ে যায় আমার মাহরিন।

তিনি আরও বলেন, শেষ রাতে হাসপাতালে ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। আইসিইউতে শুয়ে ও আমার হাত নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছিল। বলেছিল- আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। আমি ওর হাত ধরতে গিয়েছিলাম, কিন্তু শরীরটা এমনভাবে পুড়ে গিয়েছিল যে ঠিকভাবে ধরতেও পারিনি।

মৃত্যুর আগে আমার বুকের কাছে মাথা যখন রেখেছিল তখন মাহরিনকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না? সে বলেছিল, ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি? আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি।

মনসুর হেলাল বলেন, ওকে বাঁচাতে পারিনি। আমার দুটি ছোট ছোট বাচ্চা এতিম হয়ে গেল।

মাহরিন চৌধুরীর বাবার বাড়ি নীলফামারী জলঢাকা উপজেলা বগুলাগাড়ী চৌধুরীপাড়ায়। মহিতুর রহমান চৌধুরী ও সাবেরা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে ২০০২-০৩ সালের দিকে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত হন মাহরিন চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পযন্ত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মিডিয়াম শাখার তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কো-অর্ডিনেটর ছিলেন।

তার শ্বশুরবাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চরআত্রাই গ্রামে। স্বামী মনছুর হেলাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার। বৈবাহিক জীবনে দুই ছেলে সন্তান আয়ান রশীদ ও আদেল রশীদের মা ছিলেন মাহরিন। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। জিয়াউর রহমানের মা জাহানারা বেগম এবং মাহরিন চৌধুরীর দাদি রওশনারা বেগম ছিলেন আপন বোন।

জলঢাকার বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মহুবার রহমান বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মাহরিন চৌধুরী কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। গত ২২ জুন তিনি প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন। প্রতিদিনই তিনি একবার করে হলেও ফোনে আমার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক সমাবেশ আহ্বান করা নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে সবশেষ কথা হয়। এরপর খবর পাই তিনি বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন এবং রাতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষক ও একজন মা হিসেবে মাহরিন নিজের জীবনবাজি রেখে অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচিয়ে আজ না ফেরার দেশে। তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা পুরো জাতি মনে রাখবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৩ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

২৩ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য মুরাদনগর বিএনপির দোয়া মাহফিল

মধ্যপ্রাচ্য : বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র

ফের ইউনেস্কো থেকে বের হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

নিহত বেড়ে ৩২, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক

বিধ্বস্তের আগে কন্ট্রোল রুমে কী বলেছিলেন পাইলট তৌকির

সরকারকে কঠোর হতে বলল রাজনৈতিক দলগুলো

তুরস্ক থেকে হাসপাতালে ছুটে এলেন বিমানবাহিনীর প্রধান 

১০

২৫তম বিসিএস (পুলিশ) ফোরামের নতুন কমিটি

১১

জাতি শিল্পীদের কাছে আরেকটু দায়িত্বশীলতা আশা করে : সংস্কৃতি উপদেষ্টা

১২

এই শোকের সময়ে শান্ত থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

১৩

প্রধান উপদেষ্টার পাশে থাকার আশ্বাস চার দলের

১৪

সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সফল রাষ্ট্র বানানো সম্ভব নয় : হাসনাত কাইয়ূম

১৫

মামদানির নীতিকে ‘ননসেন্স’ বললেন নেতানিয়াহু

১৬

‘হানির লগে যুদ্ধ করি ত্রিশ বছর কাডাই দিছি’

১৭

ট্রাম্পের চাওয়ায় কোকা-কোলায় এলো পরিবর্তন

১৮

নকল সিগারেট তৈরির কারখানার সন্ধান, আটক ৪

১৯

ওষুধের দাম বেশি নিলে ছাড় নয়, ভোক্তা অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি

২০
X