আব্দুল লতিফ সরকার। রাজশাহীর তানোর পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। বছর দুয়েক আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে চলাফেলা শুরু করে হয়ে যান দাপুটে আওয়ামী লীগার। বিশেষ করে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার সঙ্গে চলাফেলা করে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করে চলছেন প্রতিনিয়ত। শুধু তাই নয়; ফোনে নিজেকে মাঝেমধ্যেই এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পরিচয় দিয়েও লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। নিজেকে এমপি পরিচয় দিয়ে কথা বলার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জানা গেছে, রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) তানোর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব সহকারীসহ তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় ল্যাব সহকারী পদে আব্দুল লতিফের ছেলে রাজু সরকার অংশ নেন। নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন আব্দুল লতিফ। ‘চাকরির জন্য ১৯ লাখ টাকা দিয়েছি’ দাবি করে ছেলেকে পরীক্ষায় অবৈধ সুযোগও করিয়ে দেন তিনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংবাদিকরা সেখানে গেলে তাদেরও লাঞ্ছিত করেন আব্দুল লতিফ। পরে প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গেও লতিফের ধাক্কাধাক্কি হয়। লিখিত ও মৌখিক নিয়োগ পরীক্ষা শেষে রোববার রাতেই রাজু সরকারকে কম্পিউটার ল্যাব সহকারী পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ছেলের চাকরির বিষয়ে জানতে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা আব্দুল লতিফের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি নিজেকে প্রথমে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলে পরিচয় দেন। এ নিয়ে কথোপকথনের পর তিনি তানোর উপজেলা ধর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান বলে দাবি করে গণমাধ্যম কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দও করেন তিনি।
বিষয়টি জানতে আব্দুল লতিফকে ফোন করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে একটি নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছে। সেখানে আমি গিয়েছিলাম। তবে কোনো ঝামেলা হয়নি। নিয়োগের জন্য আমি কোনো টাকাও দেইনি।’
নিজেকে এমপি পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। কথাটা আমি বলে ফেলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। কোনো রাজনীতি করি না।’ আপনি নাকি পৌর যুবদলের সভাপতি ছিলেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুই চার বছর আগে ছিলাম। এমপি ভালো মানুষ। আমি এখন তার সঙ্গেই থাকি। তার রাজনীতি করি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আব্দুল লতিফ সরকার দীর্ঘদিন তানোর পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। তার ভাতিজা রঞ্জু সরকার বর্তমানে তানোর পৌর ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পুরো পরিবার বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে আব্দুল লতিফ সম্প্রতি ঘোষিত তানোর পৌরসভা আওয়ামী লীগের পদ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
লতিফের বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘লতিফকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তাকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি না। পৌর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাকে দেখা যায়। তবে সে পূর্বে বিএনপি করত কিনা বা পদপদবিতে ছিল কিনা সেটিও আমার জানা নেই।’ সে বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোনো পদপদবিতে নেই জানান তিনি। এসব বিষয়ে তানোর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, ‘লতিফ কখন কি বলে তার ঠিক নেই। আসলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। সে আওয়ামী লীগের প্রোগামে থাকে। তবে এখনো সে কোনো পদপদবিতে নেই।’
তার ছেলের নিয়োগের জন্য টাকা-পয়সা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘এগুলো সঠিক কথা না, বর্তমানে এখন সবাই আপন আপন স্বার্থের জন্য কথা বলে। নিয়ম মেনে তার ছেলেকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।’
মন্তব্য করুন