কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর ও কোনাবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গণঅভ্যুত্থানে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে তুরাগ নদীতে ডুবুরি দল

গণঅভ্যুত্থানে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে তুরাগ নদীতে অভিযানে নামে ডুবুরি দল। ছবি : কালবেলা
গণঅভ্যুত্থানে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে তুরাগ নদীতে অভিযানে নামে ডুবুরি দল। ছবি : কালবেলা

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে নিখোঁজ কলেজছাত্র হৃদয়ের (২০) লাশ উদ্ধারে তুরাগ নদীতে অভিযানে নেমেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে এ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে অংশ নিয়েছে গাজীপুর, টঙ্গী ও ঢাকার ডুবুরি দল। অভিযানে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গ্রেপ্তারকৃত এক আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নিহত কলেজছাত্র হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি হেমনগর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি কোনাবাড়ী এলাকায় অটোরিকশা চালাতেন। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের সময় গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পাশে গুলি করে ওই কলেজছাত্রকে হত্যার ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপস্থিতিতে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ। উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিখোঁজ হন হৃদয়। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ জাস্টিস প্রজেক্ট’ ও ‘টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট’ হৃদয়ের ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে। সেখানে হৃদয়কে গুলি করার দৃশ্যও উঠে আসে। এর পর থেকেই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ সদস্য আকরাম হোসেনসহ আরও একজন গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তুরাগ নদে ডুবুরি দল লাশের সন্ধানে নামে। বিকেল পর্যন্ত ওই অভিযান চলছিল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এসএম তাসমিরুল ইসলাম, গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ মামুন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উপপরিচালক মোহাম্মদ মামুন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি চিঠিতে আদিষ্ট হয়ে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা নদীতে নেমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে নদীর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তবে পানির স্রোত বেশি রয়েছে। বিকেল পর্যন্ত নদী থেকে তেমন কোনো কিছু উদ্ধার হয়নি।

এর আগে, এ ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল মো. আকরাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি গাজীপুর শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট হৃদয় কোনাবাড়ী সড়কে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি দেখে হৃদয় রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন শিল্প পুলিশে কিছু সদস্য। তারা হৃদয়কে রাস্তার পাশ থেকে ধরে নিয়ে চড় থাপ্পড় মারেন। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি করলে সেখানেই তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় হৃদয়ের ফুফাতো ভাই মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে কোনোবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে হুকুমের আসামি এবং অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার বাদী ইব্রাহিম বলেন, ঘটনার দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর পুলিশ হৃদয়ের দেহ টেনে পাশের গলির দিকে নিয়ে যায়। সেই ভিডিও ফুটেজও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরে তার লাশ আর পাওয়া যায়নি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নিহত হৃদয় ও তার মামাতো ভাই ইব্রাহীম গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় অটোরিকশা চালাতেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারা কুদ্দুছ নগর অ্যাঞ্জেল গেট–সংলগ্ন সড়কে অবস্থান করছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে সেদিন ছাত্র-জনতা সরকারবিরোধী বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিল।

তখন সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে ২৫০ থেকে ৩০০ অজ্ঞাত সন্ত্রাসী ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। ওই সময় প্রাণভয়ে হৃদয় একটি দোকানে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাকে দোকান থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে আসেন। এরপর এক পুলিশ সদস্য অস্ত্র পেটে ঠেকিয়ে গুলি করেন। ঘটনার সময় আশপাশের লোকজন এবং হৃদয়ের স্বজনরা ভিডিও ধারণ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্রান্সে বাশার আল-আসাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল

১৫ জেলায় ৩ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

দুপুরের মধ্যে ৭ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

বাঁশের সঙ্গে ‘নৌকা’ ঝুলিয়ে আ.লীগ কর্মী গ্রেপ্তার 

স্লিপার বাস উল্টে শিশুসহ নিহত ১০

২৬ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় যুবকের কাণ্ড

ন্যাপ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে হতাহতদের সম্মানে আনুষ্ঠানিকতা বাতিল

ভাঙা সড়কে ধানের চারা রোপণ, সিটি করপোরেশনকে ‘লাল কার্ড’

১০

কুমিল্লায় ‘২৩ মামলার আসামি’ আল-মামুনকে কুপিয়ে হত্যা

১১

২৬ জুলাই / তিন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয় ডিবি

১২

নারী ও শিশুসহ ২১ রোহিঙ্গাকে বিএসএফের পুশইন

১৩

খুবিতে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ বৃত্তি’ পেলেন ৪ শিক্ষার্থী

১৪

স্বাস্থ্য পরামর্শ / নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখুন ভিটামিন ‘সি’যুক্ত খাবার

১৫

টেস্ট ইতিহাসে অনন্য এক উচ্চতায় জো রুট

১৬

ঠাকুরগাঁও-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী ফারুক হাসান

১৭

একাত্তর নিয়ে জামায়াত আগে ক্ষমা চাক, তারপর বিএনপির সমালোচনা : টুকু

১৮

চমেক হাসপাতালে ডে-কেয়ার সার্জারি, ‘সকালে অপারেশন, বিকেলে ছুটি’

১৯

এক বা দুই বিষয়ে ফেল করাদের কলেজে ভর্তির সুযোগ দাবি সিবগাতুল্লাহর

২০
X