পদ্মায় এখন ভরা মৌসুম চলছে। প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীর পানি। আর এ কারণেই তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ফেরিঘাটগুলো। তবে দায়সারা কথা বলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাট ও মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাট। এ নৌরুট ব্যবহার করেই প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ নদী পারাপার হয়ে রাজধানীর ঢাকায় যায়।
বর্তমান মৌসুমে পদ্মা নদীতে প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধির কারণে একদিকে যেমন ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে দৌলতদিয়া প্রান্ত এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে ঘাটগুলো। এতে ভোগান্তি বাড়ছে।
পদ্মায় পানি বাড়ায় আগের চেয়ে এ নৌরুটে ফেরি চলাচলে দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পারাপাররত যাত্রী ও চালকদের। তীব্র ভাঙনে ঘাটগুলোতে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তায় পড়ছেন নদীপারের হাজার হাজার বাসিন্দাসহ সংশ্লিষ্ট ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে ফেরিতে গাড়িগুলো রোড-আনলোডে বেগ পোহাতে হচ্ছে চালকদের।
তবে প্রতিবছরই এমন চিত্র দেখা গেলেও ভাঙনরোধে স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
তীব্র ভাঙনে ঝুঁকিতে থাকা ফেরিঘাটগুলো ভেঙে গেলে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ নেমে আসবে এবং বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে সরকার। এজন্যই দ্রুতই জিও ব্যাগ বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ ও পাড়ের বাসিন্দারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাটে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেভাবে রাতে ও দিনে নদীর পাড় এবং ঘাটের কোল ঘেঁষে ভাঙছে, এতে ঘাটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বেশি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট।
ফেরিঘাট সূত্র কালবেলাকে জানায়, দৌলতদিয়া প্রান্ত এলাকায় নামে বা কাগজ-কলমে ৭টি ঘাট থাকলেও সচল রয়েছে মাত্র ৩টি। সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি এবং এ ঘাটটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে বসানো ৬ নম্বর পন্টুনের আশপাশেও চলছে তীব্র ভাঙন। ঝুঁকিতে রয়েছে বন্ধ এ ঘাটটিও। এর আগে ১, ২, ৫ নম্বর ঘাট ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
পাড়ের বাসিন্দা ফতে বেগম কালবেলাকে বলেন, তীব্র ভাঙনে নিমেষেই ৭ নম্বর ফেরিঘাটের সঙ্গে বসতবাড়িটি বিলীন হয়ে গেল। যেভাবে ভাঙছে এ গ্রামটি কয়েকদিনের মধ্যেই নদীতে চলে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ কালবেলাকে বলেন, নদীতে পানি বাড়ার পর থেকেই ৪নং ফেরিঘাট ভাঙছে। এখন তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরিভাবে জিও ব্যাগ না ফেলালে মসজিদসহ বসতবাড়ি ও নানা স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরই ফেরি ঘাটগুলো ভাঙছে এবং ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছরই দায়সারা কাজ করলেও এ বছর এখনো ভাঙনরোধে জরুরি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ঘাট কর্তৃপক্ষ কালবেলাকে জানায়, পদ্মায় পানি বাড়ায় আগের চেয়ে বর্তমানে নদী পার হতে দ্বিগুণ সময় লাগছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন কালবেলাকে জানান, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকাটা ভাঙন কবলিত। ঘাটের আশপাশে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে স্থানীয়দের বাড়িঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ঘাটগুলো। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি। এজন্য বিআইডব্লিউটিএর ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছেন। এ নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের বহরে মোট ১৫টি ফেরি আছে। বর্তমানে ছোট-বড় মিলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১২টি ফেরি চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ কালবেলাকে জানান, ফেরিঘাটগুলো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দ্রুতই আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আমরা বিষয়টি ওপর মহলে জানিয়েছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান কালবেলাকে জানান, ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে আমরা পরিদর্শন করেছি। একই সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। ফেরি সচল রাখার স্বার্থে যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেইটুকু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত আছে বলে আমাদের জানিয়েছে। আমরাও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এ রকম কোনো সমস্যা যেন তৈরি না হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
মন্তব্য করুন