চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্কুলে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানচাপায় রবিউল হোসেন ফাহিম নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থী নিহতের খবরে সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এলেও শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষে শিক্ষকরা মিষ্টি খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের টেরিয়াইর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফাহিম উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের ফেদাইনগর গ্রামের হারুন হোসেনের ছেলে ও টেরিয়াইর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফাহিম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে বিদ্যালয়ে প্রবেশের আগ মুহূর্তে একটি পিকআপভ্যান তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে সে লুটিয়ে পড়ে। স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয়ারা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ফাহিম।
সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, নিহত ফাহিম স্কুলের সামনে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে। ফাঁকা রাস্তার মধ্যে পিকআপ ভ্যানটি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হয়।
বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া দেখা গেলেও শিক্ষকদের মাঝে কোনো শোক দেখা যায়নি। শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষে চলছে মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের খাওয়া-দাওয়া। এতে স্কুল শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে।
শ্রাবন্তী নামের এক শিক্ষার্থী বলে, ফাহিম ভাইয়া বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুতে শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে প্রধান শিক্ষকের রুমে মিষ্টি খাওয়ার বিষয়টি দেখে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে।
ফারিয়া নামের আরেক শিক্ষার্থী বলে, শিক্ষকরাই যদি একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে মিষ্টি খাওয়াতে ব্যস্ত থাকে সেটি খুবই দুঃখজনক।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলে, নিহত ফাহিম ব্যবসা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ও রোল নম্বর ১। সে শুধু পড়ালেখায় নয়, খেলাধুলায়ও ছিল যথেষ্ট পারদর্শী।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে নিহত ফাহিমকে নিয়ে আমি হাসপাতালে ব্যস্ত ছিলাম। মিষ্টি খাওয়ার বিষয়টি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমি এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেব।
টেরিয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন বলেন, স্কুলের তিনজন নতুন শিক্ষক এসেছেন। তারাই মিষ্টি নিয়ে এসেছে। অন্য শিক্ষকরা মিষ্টি খেলেও আমি সকাল থেকে এ পর্যন্ত কিছু খাইনি।
কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকির রাব্বানী বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাই। পরে শিক্ষার্থীদের স্বজনদের মাধ্যমে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে সে। গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, একজন ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তাতে আমরা শোকাহত। কিন্তু একটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনার পরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসার কথা। সেখানে যদি শিক্ষকরা মিষ্টি খান সেটা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।
মন্তব্য করুন