বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অমর নায়ক সালমান শাহ। তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছেন তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সালমান শাহকে নিয়ে রঙিন হচ্ছে ভালোবাসার রঙ। টিভির পর্দায় এখনো তার সিনেমা প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন।
বছরঘুরে বাংলা চলচ্চিত্র আজন্ম ব্র্যান্ড খ্যাত এ অভিনেতার জন্মবার্ষিকী এলে ভক্তদের ভিড় হয় তার জন্মস্থান সিলেট নগরীর দাড়িয়া পাড়াস্থ সালমান শাহ ভবনে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তবৃন্দ ও সিনেমা পরিচালকরাও ছুটে আসেন সালমান শাহ’র বাড়িতে। যেখানে এখনো জ্বল জ্বল করছে সালমান শাহর হাজারো স্মৃতি।
শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) ছিল এ অভিনেতার ৫৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দাড়িয়াপাড়ায় এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবার নাম কমরউদ্দিন চৌধুরী। মায়ের নাম নীলা চৌধুরী।
চলচ্চিত্রে সালমান শাহ নামেই তিনি পরিচিতি পান। অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সালমান শাহ।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সেগুলোর প্রায় সবগুলোই ছিল সুপারহিট। তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের ঠিকানা, চাওয়া থেকে পাওয়া, জীবন সংসার, প্রেম প্রিয়াসী, সত্যের মৃত্যু নেই, মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসার, তোমাকে চাই, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভেতর আগুন ইত্যাদি।
সালমান শাহর মৃত্যু বাংলাদেশের বিনোদন ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত এবং আলোচিত ঘটনা। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, সালমান শাহকে ঢাকার তার অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ প্রথমে জানায় যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, যা তার ভক্ত, সহকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। বছরের পর বছর ধরে তার মৃত্যুকে ঘিরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তৈরি হয়েছে।
পরিবার ও ভক্তদের দাবি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাছে সালমান শাহ মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার ও তার স্মৃতি রক্ষার জন্য ঢাকার এফডিসিতে বা সিলেটের যে কোনো একটি সড়ক কিংবা চত্বরের সালমান শাহর নামে নামকরণের দাবি জানান।
বিভিন্ন সময়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সালমান শাহর মৃত্যুর সঠিক বিচার দাবি করে এলেও জন্মদিনে অনেকটা বাকরুদ্ধ তার মামা আলমগীর কুমকুম। প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
শনিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সালমান শাহর সিলেটের বাড়িতে ভিড় জমান তার অগণিত ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীরা। সুনামগঞ্জ থেকে সুমন আহমদ বলেন, সিনেমায় সালমান শাহ নতুন কিছু স্টাইুল নিয়ে এসেছিলেন, যা পরবর্তীতে কেউ দেখাতে পারেননি। তিনি আসলেই স্বপ্নের নায়ক হিসেবে আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন।
নবীগঞ্জ থেকে আসা সালমান শাহ ভক্ত শাহ আলম বলেন, অনেকের বিচার হয়েছে। কিন্তু সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় এখানো বিচার হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ঢাকা থেকে সালমান শাহর বাড়িতে আসা চলচ্চিত্র পরিচালক রেজা হাসমত বলেন, সালমান শাহ এমন এক মানুষ চলচ্চিত্রের একটি মানুষও তার বিপক্ষে বা ভালোবাসে না এমন লোক নেই। সে প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যেকটা মানুষকে ভালোবাসত এবং সে নিজের পরিবারের লোক মনে করত।
তিনি বলেন, বিশেষ করে আমি সরকারের কাছে আবেদন করে আসছি সিলেট জেলার যে কোনো একটি রোড কিংবা একটি স্থানে সালমান শাহর নামে চত্বর প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
মন্তব্য করুন